লালমনিরহাট: জমি লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া অভিযোগ উঠেছে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে। বিচার চেয়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃদ্ধা মা তছিরন বেওয়া (৭৫)।
বৃদ্ধা তছিরন বেওয়া আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন (৫৫) তারই নাড়ি ছেড়া ধন একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়া (৪৮)।
অভিযোগে জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই বাবা-মাকে হারিয়ে অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে উত্তর গোবদা গ্রামের আনছার আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় তছিরনের। এক ছেলে এক মেয়ে রেখে দীর্ঘ ৫০ বছর আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী আনছার আলী মারা যান। মাত্র ৬ মাস বয়সী মেয়ে আনিছা ও ৩ বছর বয়সী ছেলে আনোয়ার হোসেনকে অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে বড় করেন। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন।
দীর্ঘদিন অন্যের জমিতে বসবাস করে ছেলে মেয়ের বিয়ের পর পৈত্রিক সূত্রে ৫৪ শতাংশ জমি পান তছিরন বেওয়া। ফলে সেই জমিতে শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় তার। সেই জমিই কাল হয়ে দাঁড়ায় বৃদ্ধার। বাড়ি করা ১১ শতাংশ জমি ছেলে আনোয়ার হোসেনকে এবং চাষাবাদের জমির ১৫ শতাংশ মেয়ে আনিছাকে দলিল করে দেন বৃদ্ধা। বাকি জমিতে আসা ফসল আর বয়স্ক ভাতার টাকায় চলত তার সংসার খরচ। ছেলে ও ছেলের বউ আম্বিয়ার আচরণে নিজে রান্না করে খেতেন বৃদ্ধা।
১০ মাস আগে ছেলে আনোয়ার হোসেন চাষাবাদের বাকি ২৮ শতাংশ জমি মায়ের কাছ থেকে দলিল করে নেন। এরপর মায়ের ওপর অত্যাচার বাড়িয়ে দেন। খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দেন। উল্টো বিগত দিনে চিকিৎসা বাবদ মায়ের জেন্য খরচ হওয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সম্বলহীন বৃদ্ধা তছিরন সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪ মাস আগে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে আনোয়ার ও ছেলের বউ আম্বিয়া।
নিরুপায় হয়ে একমাত্র মেয়ে আনিছা বেগমের বাড়িতে পাড়ি জমান বৃদ্ধা তছিরন। সেই থেকে মেয়ে জামাই তার দেখভাল করছেন। বৃদ্ধা মাকে স্থান দেওয়ায় বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হন ভাই আনোয়ার ও তার স্ত্রী।
বিগত দিনের মত এ বছরও মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোপণ করেন আনিছা। গত শনিবার (১৯ আগস্ট) সেই জমিতে সার দিতে গেলে বাঁধা দেন আনোয়ার। দাবি করেন, মায়ের চিকিৎসা করাতে খরচ হওয়া সেই ২০ হাজার টাকা না দিলে জমিতে নামতে পারবে না। বৃদ্ধা তছিরন মেয়ের বাড়িতে থাকেন তাই তার পাওনা টাকা মেয়ে আনিছাকেই পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় জমিতে নামতে পারবে না।
এদিকে চিকিৎসায় খরচ করা সেই ২০ হাজার টাকা ছাড়া বাড়ি ফিরলে বৃদ্ধা তছিরনকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন ছেলে আনোয়ার। এ ঘটনায় তছিরন বেওয়া ভরণপোষণ ও তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ছেলে, ছেলের বউ এবং দুই নাতির বিরুদ্ধে গত রোববার (২০ আগস্ট) আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বৃদ্ধার মেয়ে আনিছা বেগম বলেন, মাকে কখনই মা বলে ডাকেনি ভাই আনোয়ার। বিয়ের কিছুদিন পরেই বউয়ের কথামতো মাকে মারধর করেছিল। তখন গ্রামবাসী তাকে শাসনও করেছিল। এখন মায়ের জমি লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি আশ্রয় দিয়েছি জন্য মায়ের কাছে পাওনা ২০ হাজার টাকা আমাকে পরিশোধ করতে বলে। টাকা পরিশোধ না করায় আমাকে জমিতে নামতে বাধা দেয়।
আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বৃদ্ধা তছিরন বেওয়া বলেন, বউয়ের কথা মতো ছেলে অনেক নির্যাতন করেছে। বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আমার ঘরে তালা দিয়েছে। পরিচয়পত্র নিতে গেলেও আমাকে দেয়নি। এখন চিকিৎসা করানোর ২০ হাজার টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে সবাই সন্তানদের আশ্রয়ে নিরাপদ থাকে। আমার ক্ষেত্রে উল্টো। সন্তানই এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। আমি ন্যায় বিচার চাই।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
আরএ