ঢাকা: রাজধানীতে ভয়ংকর অপহরণ চক্রের হাত থেকে কোনো রকম প্রাণে বাঁচলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী যুগ্ম কমিশনার। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গ্রেপ্তাররা হলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত রাজু।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তিনি কৌশলে মুক্তি পান। ভুক্তভোগী ওই নারী এনবিআর-এর কর অঞ্চল-২-এ কর্মরত।
শনিবার (১৯ আগস্ট) এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়।
মামলার এজাহার জানা যায়, নির্যাতনে বাঁ পা ভেঙে গেছে মাসুমা খাতুনের। তার চোখও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাথা ফেটে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধেছে।
দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরও মন গলেনি অপরাধী চক্রের। মুক্তিপণের পুরো টাকা আদায়ের জন্য চলে শারীরিক নির্যাতন। দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ভাগ্যগুণে বেঁচে যান তিনি।
আরও জানা যায়, ১৮ আগস্ট রাত ৮টার দিকে মাসুমা খাতুন বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন। সোয়া ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় গাড়িটি পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। চালক গাড়িটি থামালে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক গাড়ি চালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেন। এরপর তারা ভুক্তভোগী ও গাড়িচালক আনোয়ারকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে আনোয়ারকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ভুক্তভোগীকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান তারা। ওই রাতে সবুজবাগের একটি বাসার গ্যারেজে গাড়িটি ঢোকানো হয়। ওই গাড়িতেই আটকে রেখে তার ওপর রাতভর চলে নির্যাতন।
নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীর চিৎকার যাতে বাইরে না যায়, সেজন্য তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে পানি চাইলে স্কচটেপ খুলে দেওয়া হয়। এভাবে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন। এ সময় তার কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যান তারা।
এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগীর স্বামী ইলিয়াস খান জানান, ১৮ আগস্ট রাতে স্ত্রীর সন্ধান না পেয়ে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। ১৯ আগস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি স্ত্রীর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। ২টার পর দুর্বৃত্তরা তাদের চক্রের দুই-তিনজনকে গাড়ির পাহারায় রেখে অন্যরা দুপুরের খাবার কিনতে যান। এই সুযোগে মাসুমা খাতুন গাড়ি থেকে নেমে বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। এরপর ভুক্তভোগীর স্বামী পুরো ঘটনা পুলিশকে জানান।
জানা যায়, মামলার পর পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ভুক্তভোগীর সাবেক গাড়িচালক মো. মাসুদ একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। মাসুদই পরিকল্পনা করে তাদের বাহিনীর সদস্যদের তথ্য দেন, ভুক্তভোগীকে অপহরণ করা গেলে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা সম্ভব। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগীদের নিয়ে মাসুদ এ ঘটনা ঘটান। এরই মধ্যে মাসুদের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মাসুদকে এখনো গ্রেপ্তার হননি। এছাড়া তার অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে শান্ত, পনু, শাহীনসহ আরও ৫-৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
এদিকে, একদিনের রিমান্ড শেষে গ্রেপ্তার তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনই পুলিশের রিমান্ডে অপহরণের দায় স্বীকার করেছেন। মাসুদসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ। ইতোমধ্যে মাসুদের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে।
রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, ভিকটিমকে উদ্ধার এবং তিন আসামি গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট একটি মামলা হয়।
আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি আরও জানান, মাসুদ তার সহযোগীদের জানিয়েছিলেন, ভুক্তভোগী যুগ্ম কমিশনারকে অপহরণ করতে পারলেই মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে। টাকার লোভেই এই অপহরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। চক্রে একাধিক পেশাদার সদস্য রয়েছেন। ভিকটিম এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী মাসুদের অবয়বের একটি চিত্র তৈরি করেছি। তার মুখে দাড়ি আছে। আমরা তার বাসা খুঁজে বের করেছি।
ভিকটিম খুবই অসুস্থ। এ কারণে তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারিনি। তিনি সুস্থ হলে মাসুদ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। একইসঙ্গে দ্রুতই মাসুদ ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
এমএমআই/এসআইএস