কক্সবাজার: আমরা আর এক মিনিটও এ দেশে থাকতে চাই না। মিয়ানমার আমাদের দাবি মেনে নিলে এক কাপড়ে দেশে ফিরে যাব।
এ সময় রোহিঙ্গারাও উচ্চস্বরে ‘উই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক মিয়ানমার’ বলে বলে স্লোগান দেন।
খিনমং আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, সে দেশের জমিদার ছিলেন। প্রচুর ধন সম্পদের মালিক। কিন্তু এখানে এসে তারা ত্রিপলের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা নিজের ভিটেবাড়িতে ফিরে যেতে চাই।
তবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা সন্বোধন করেন, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা আগমনের ৬ বছরে জাতি হিসেবে স্বীকৃতি, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজ ভিটেমাটিতে ফেরতসহ দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের চারটি রোহিঙ্গা শিবিরে সমাবেশ করেছেন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার জামতলী, ময়নারঘোনা, বালুখালী এবং সবচেয়ে বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে। এছাড়াও ছোট পরিসরে আরও নয়টি ক্যাম্পে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
প্রত্যেক সমাবেশে রোহিঙ্গারা ৫ দফা দাবিসহ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
‘জেনোসাইড সারভাইভরস রোহিঙ্গা’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে রোহিঙ্গারা দ্রুত নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানান এবং রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিচার দাবি করেন।
এছাড়া সমাবেশে ২০১৭ সালে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া হত্যা ও ধর্ষণসহ নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার দাবি, রোহিঙ্গা মর্যাদা দিয়ে অবিলম্বে প্রত্যাবাসন শুরু, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার, ৮২ সালের মিয়ানমারের সিটিজেনশিপ আইন বাতিল, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য সেফজোন প্রতিষ্ঠাসহ ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবি বাস্তবায়নে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এ সময় তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
এসব সমাবেশে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) জেলা পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশে এআরএইচপিএইচ এর সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর, সৈয়দ উল্লাহ, মাস্টার নুরুল আমিন, মোহাম্মদ রফিক, জমাদিলা বেগম এবং ময়নারঘোনায় রোহিঙ্গা নেতা খিং মংসহ রোহিঙ্গা নেতারা বক্তব্য দেন।
আন্তর্জাতিক মহলের সদিচ্ছার অভাবে ৬ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি জানিয়ে জুবায়ের বলেন, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র আমেরিকা ছাড়া কোনো দেশ রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
প্রত্যাবাসনের বিষয় আন্তরিকভাবে চেষ্টাও কোনো দেশ করছে না। যে কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরতে পারছে না।
মিয়ানমার জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশ তবুও চীনসহ কিছু কিছু দেশের রহস্যজনক ভূমিকায় প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখছে না। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে এতদিন আমরা নিজ দেশে ফেরে যেতে পারতাম। যোগ করেন জুবায়ের।
এর আগে ২০১৯ সালে ২৫ আগস্ট বড় পরিসরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহর নেতৃত্বে এ ধরনের সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি।
প্রসঙ্গত, নিজ দেশ মিয়ানমারে গণহত্যাসহ নানা দমন নিপিড়নের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়। বর্তমানে এর আগে এবং পরে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাস করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
এসবি/জেএইচ