ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বিষয় নয়, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করছে ডিবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বিষয় নয়, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করছে ডিবি

ঢাকা: কে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সেটি মুখ্য বিষয় নয়, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।

সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

সম্প্রতি ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

রাজনৈতিক উদ্দেশে ছাত্রদল নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিবি প্রধান বলেন, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সাতজন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা বলে যদি কেউ এটিকে হয়রানির উদ্দেশে অভিযান বলে এটা ঠিক না। ডিবি সত্যিকার অর্থে অস্ত্রধারী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে, এটি চলমান থাকবে।

অস্ত্রধারী কোনো দলের হতে পারে না, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বরং ছাত্রদলের ওই সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে দলীয়ভাবে বহিষ্কার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি ডিবি গুলশান বিভাগ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এরই ধারাবাহিকতায় কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলিসহ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাচান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের কাছ থেকে চারটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

তারা ফেসবুকে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের মোবাইল থেকে কথোপকথনের প্রমাণ আমার পেয়েছি। কোন কোন অস্ত্র কোথায় তারা ব্যবহার করবেন সেসবও তাদের কথোপকথনে উঠে এসেছে। কোন দলের নেতা বা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা আমাদের উদ্দেশ্য না। তবে যারা চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা করবে তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান।

যদিও অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হয়রানি করার উদ্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক কথাবার্তা। আমরা আমাদের আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা যে ১১টি অস্ত্র কেনার জন্য অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে অর্ডার করেছে, সেটি প্রমাণিত।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তাররা হয়তো ছাত্রদলের নেতাকর্মী। কিন্তু এর আগেতো শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকে আমরা অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছি, বাড্ডা থানা অস্ত্র মামলায় আমরা নাসির, কাউসার, জীবনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা। কিছুদিন আগে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার হারুন ও রশিদ হত্যা মামলার আসামি আসাদুজ্জামানকে দুটি অস্ত্রসহ আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি।

সম্প্রতি গ্রেপ্তাররা ছাত্রদলের বলে কেন তবে প্রশ্ন উঠছে? আমাদের উদ্দেশ্যটা রাজনৈতিক নয়। কে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সেটি আমাদের মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে, সে অস্ত্র ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি। তাই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় আমরা করবো। তারা যদি কোনো দলের ছত্রছায়ায় এসব করে তাহলেও আমরা ছাড় দেব না।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ছাত্রদলের সাত নেতাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছি তারা ১১টি অস্ত্র অর্ডার করেছে। এর মধ্যে আমরা মাত্র চারটি উদ্ধার করতে পেরেছি। আরও ৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার বাকি রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা কেন অস্ত্র কিনছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১১টা অস্ত্র তারা অনলাইনে বুকিং করেছে, তার ছবি আমরা পেয়েছি। ১১টি অস্ত্রই কাদের কাছ থেকে তারা সংগ্রহ করেছে, তাদের নামও আমরা জেনেছি। সেগুলো কোথায় এবং কি কাজে তারা ব্যবহার করবে, সেগুলো আমরা জেনেছি তবে তা আমরা এখনই বলছি না।

সামনে নির্বাচন সামনে রেখে কি সহিংসতার উদ্দেশে রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তো পরিষ্কার। নির্বাচনের অল্প কিছুদিন বাকি, এখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এ সময়ে ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা ১১টি অস্ত্র সংগ্রহ করলেন বোমা সংগ্রহ করলেন, মোবাইল ফোনে কথোপকথনে সেগুলো কোথায় ব্যবহার করবে সেটিও বললেন। নিজেদের মধ্যে অস্ত্রগুলো বণ্টন, এটি কিসের আলামত? 

আলামত যাই হোক না কেন, আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে, অবৈধ অস্ত্রধারীরা যারাই হোক না কেন, তারা যে দলই করুক না কেন প্রত্যেককে আইনগত প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের রিমান্ডে এনে তাদের গডফাদারদের আমরা খুঁজে বের করবো ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

পুলিশকে দুর্বল মনে করে যদি ঢাকা শহরে কোনো অস্ত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াবে, আর ডিবি বসে থাকবে এটি হতে পারে না। আইনগত প্রক্রিয়া আমাদের যা যা করা দরকার আমরা তাই করবো।

ডিবি প্রধান বলেন, আর কেউ যদি অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ধরার পরে পুলিশকে হুমকি দেয়, তাদের মনে রাখা উচিত, কারো হুমকিতে ডিবি পুলিশ ভয় পায় না। আমরা যাদের নাম পেয়েছি তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
পিএম/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।