ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাতার চিঠি পেয়ে আনন্দে কাঁদলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
ভাতার চিঠি পেয়ে আনন্দে কাঁদলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

খুলনা: হাসপাতালের বিছানায় বসেই পেলেন অবসরভাতার চিঠি। অনাকাঙ্ক্ষিত চিঠি পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেললেন অবসরে যাওয়া সহকারী শিক্ষক হরিদাস রায়।

মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন হলো তার চেহারা। আনন্দ আর উচ্ছ্বাস দেখা দিলো তারমধ্যে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাকে দেখতে আসা সহকর্মী ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্বজনেরা। ঘটনাটি ঘটেছে খুলনার স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ।

সোমবার (২৮ আগস্ট) সকাল ১০ টা১৫ মিনিটে খুলনার স্থানীয় ক্লিনিকে দেখতে আসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম ও তার সহকর্মীরা। সঙ্গে উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন অবসরভাতার চিঠি। তুলে দেন সহকারী শিক্ষক হারিদাস রায়ের হাতে।

চিঠি পেয়ে হরিদাস রায় বলেন, সত্যিই আজ আমি আনন্দিত। ১৯৮৬ সালে আমি যোগ দেই বটিয়াঘাটা জলমা কচুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে (পিআর এল) যাই। ২০২৩ সালের ২২জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ অবসরে যাই। এরমধ্যেই আমার অবসরভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু আমি অবসরভাতা পাইনি।

কারণ হিসেবে তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু এই স্কুলের জমি নামজারিতে সমস্যা রয়েছে তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অবসরভাতা বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষক হওয়ায় আমাকে এ সংকটে পড়তে হয়েছে । আমি নামজারি করার চেষ্টা করে প্রায় শেষের পথে নিয়ে এসেছি। এরমধ্যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার চার মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী হওয়ায় নগদ আয়ের পথ নেই বললেই চলে। ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করাও প্রায় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারমধ্যে এ উপহার পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।

এ প্রসঙ্গে খুলনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, আমি ২৭ আগস্ট দাকোপে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ঠিক করলাম জলমা কচুবুনিয়া স্কুলটি পরিদর্শন করবো। পরিদর্শনকালে প্রধান শিক্ষিকা নির্মলা মন্ডল ঘটনাটি জানান এবং বলেন শিক্ষক হরিদাস রায় হাসপাতালের বিছানায়। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই। তার কাছ থেকে শুনে সব জটিলতা কটিয়ে চিঠি করার জন্য অফিসকে নির্দেশ দেই। সেই চিঠি নিয়েই আজ আমার সহকর্মীদের নিয়ে দিতে এসেছি। দিতে পেরে আমিও আনন্দিত।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জি এম আলমগীর বলেন, স্কুলের নামজারি না হওয়ায় একটু সংকট হয়েছিল। তারপর আমি ২৪ আগস্ট তার অবসরভাতার কাগজটি জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছি।

প্রধান শিক্ষক সমিতির কো-চেয়ারম্যানা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যতটুকু শুনেছি তিনি যশোরে থাকা কালেও এমন অনেক কাজ করেছেন।

রূপসা প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস রায় বলেন, সারাজীবনের অর্জিত অর্থ পেতে দেরি হলে সংকটে পড়তে হয়। হরিদাস রায় তার সংকটময় মুহূর্তে যতটুকু পেল তা বিরল।

হরিদাস রায়ের মেয়ে শ্রিপ্রা রায় বলেন, বাবা তার ন্যায্য পাওনা পেয়েছে দেখে আমরা দারুণ খুশী। তবে এমন ভোগান্তিতে আর যেন কেউ না পড়ুক তা দেখার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
এমআরএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।