নীলফামারী: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার আট গ্রামে গেল এক বছরে কোনো বাল্যবিয়ে হয়নি। মানুষকে সচেতন ও বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এই ফলাফল মিলেছে।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ৪১টি মাধ্যমিক ও ২৫টি মাদরাসাগামী ২৯ হাজার শিক্ষার্থী এখন আলোর পথে, স্বপ্নের পথে। এর নেপথ্যে সরকারের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে কিশোরগঞ্জ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।
তারা বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা গঠনে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রসাশন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ মাধ্যমিক ও মাদরাসা পর্যায়ের প্রধানদের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে বাল্যবিয়ের কুফল ও প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।
বর্তমান সময়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অনুপ্রেরণামূলক যাত্রায় বাল্যবিয়ের হার এখন নিম্নগামী। আর বাল্যবিয়ের কুফল জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা শপথ নেয় লেখাপড়া শেষ না করে অল্প বয়সে তারা বিয়ে করবে না। অন্য কাউকেও করতে দেবে না।
ওয়ার্ল্ড ভিশন সূত্র জানায়, এক জরিপে তাদের কর্ম এলাকার ২০টি গ্রামের মধ্যে ১২টি গ্রামে তালিকাভুক্ত ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়ে শিশু রয়েছে এমন ৪ হাজার ৫৮৫টি পরিবারের মাঝে জরিপ করে। সেই জরিপের ফলাফলে দেখা যায় ২০টি গ্রামের মধ্যে ৮টি গ্রামে বিগত ১ বছরে কোনো বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়নি। অবশিষ্ট ১২টি গ্রামে বাল্যবিয়ের হার ১০.৯৭ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের কিশোরগঞ্জ উপজেলা শাখার ম্যানেজার পিকিং চাম্বুগং বলেন, বাল্যবিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিয়ে একটি শিশুর জীবনে অভিশাপ হয়ে আসে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য ওয়ার্ল্ডভিশন কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিকভাবে সবার সহযোগিতায় পারে বাল্যবিয়ে রোধ করতে। আপনাদের জরিপে দেখা গেছে, ১২টি গ্রামে বাল্যবিয়ের হার ১০.৯৭ শতাংশ। তাহলে গোটা উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার কত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা ছোট্ট পরিসরে জরিপটি চালিয়েছি। বৃহৎ পরিসরে করলে আরও বেশি হবে। এছাড়া ৮টি গ্রামে গত এক বছরে কোনো বাল্যবিয়ে হয়নি। সে বিষয়টি লক্ষ্য করলে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম নুরুল আমিন শাহ বলেন, অত্যন্ত উৎসাহজনক বিষয় হলো কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি মাধ্যমিক ও মাদরাসায় বাল্যবিয়ে মুক্ত গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বাল্যবিয়ে মুক্ত সেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনো জরিপ নেই। বাল্যবিয়ে মুক্ত হয়েছে এমন বলা যাবে না। তবে বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপজেলায় অনেকাংশে বাল্যবিয়ে কমে এসেছে। বাল্যবিয়ের খবর পেলে তাৎক্ষণিক আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দিন দিন বাল্যবিয়ের হার কমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
আরএ