ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ভাঙনে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
ভাঙনে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

লালমনিরহাট: পানি কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এ তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।

গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে উজানের প্রতিবেশী দেশ ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষাকালে বন্যা আর নদী ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভাঙন ও প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ফসলি জমি বসতভিটাসহ সকল স্থাপনা। দিশেহারা হয়ে পড়ে নদীপাড়ের মানুষ।

গত সপ্তাহের দুই দিনের বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে নদীপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর জমির ফসল। বন্যার পানি কমে গেলে ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। প্রতিনিয়তই ভাঙছে তিস্তার বামতীরের বসতবাড়ি, আবাদি জমি আর স্থাপনা। চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে আসবাবপত্রসহ বাড়ির জিনিসপত্র। সেসময় কান্নার রোল পড়ে নদীপাড়ে।

বসতভিটাহারা পরিবারগুলো ঘর ভেঙে নিয়ে সড়কের ধারে বা বাঁধের পাশে রেখেছেন। নতুন করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে  মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো। সরকারিভাবে সহায়তা করতে তালিকা করা হলেও এখন পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে প্রতি মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

সব থেকে বেশি ভাঙনের মুখে পড়েছে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্প্যার বাঁধ ২ এর ভাটিতে থাকা গোবর্দ্ধন ও গরিবুল্লাটারী গ্রাম। সোমবার (২৮ আগস্ট) দিনগত রাত ৩টায় ওই স্প্যার বাঁধ সংলগ্ন ভাটিতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। গ্রামবাসী ঘুম থেকে উঠেই তিনটি বাড়ি অন্যত্র সড়িয়ে নেয়। ভাঙনের মুখে পড়ে শত শত পরিবার মসজিদসহ স্থাপনা। দ্রুত ভাঙনরোধ করা না গেলে সলেডি স্প্যার বাঁধটিও বিলীনের শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সোমবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন রবিউল, ভুট্টু ও ইয়াকুব আলীর পরিবার। ভোর না হতেই বসতভিটা বিলীন হলো তাদের। মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেনি এই তিন পরিবারের। খবর পেয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়া ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মফিজুল ইসলাম। এসময় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ও ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও।

জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় তলদেশ ভরাট হওয়া তিস্তা নদী খনন করে দুই তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের। দীর্ঘ দিনের এ দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এ আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ন চান তিস্তাপাড়ের সম্বলহারা নিঃস্ব মানুষগুলো।

ভাঙনের শিকার রবিউল ইসলাম, ভুট্টু ও ইয়াকুব আলী বলেন, মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ঘরবাড়ি খুলে নিয়ে রাস্তায় রেখেছি। চোখের সামনে অনেক জিনিস ভেসে গেছে। সন্তানদের নিয়ে সরে এসেছি। ভাঙনরোধ করা না গেলে স্প্যার বাঁধও বিলীন হবে। আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।

মহিষখোচা ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, মাঝরাতে লোকজনকে ডেকে নিয়ে ৩টি বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে বলেও ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাদের দাবি জরুরি কাজের কোনো বরাদ্দ নেই। স্প্যার বাঁধ-২ এর ভাটির ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে বাঁধটিও ধসে যাবে তিস্তায়। গেল সাতদিন প্রায় ২৪/২৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, পানি কমে যাওয়ায় বাম তীরের পাঁচ/সাতটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্প্যার বাঁধ-২ এর ভাটিতে যে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে তা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যা নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে। আপাতত জরুরিভাবে কয়েকটি পয়েন্টে ছোট ছোট কিছু কাজ চলমান রয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। একই সঙ্গে স্প্যার বাঁধ রক্ষায় জরুরি ভাঙনরোধের ব্যবস্থা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।