ঢাকা: তিনটি শিফটে ঢামেকের নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন ৩৫০ আনসার সদস্য। কমবেশিও হতে পারে।
হাসপাতালের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় হিরন-শাহিনার দম্পতি তিনদিন বয়সের নবজাতক আব্দুল্লাহ চুরি হয়ে যায়। দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখনও চুরি যাওয়ার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় ওয়ার্ডে অবস্থান করছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সন্তান হারিয়ে অশ্রুসিক্ত হিরন-শাহিনা দম্পতি।
এ সময় শাহিনাকে বলতে শোনা যায়, এই ওয়ার্ডের সব মায়েদের পাশে তাদের সন্তান আছে। তারা সন্তানকে বুকে নিয়ে খাওয়াচ্ছে, আদর করছে। শুধু আমার কোল খালি হয়ে গেল। আমি আর কিছুই চাই না। আমার সন্তানকে যেভাবে হোক ফিরিয়ে দিতে হবে। যতদিন পর্যন্ত সন্তান পাব না, ততদিন আমি হাসপাতাল থেকে যাব না।
আরও পড়ুন: ‘আমার স্বপ্ন চুরি হয়ে গেল’
এ সময় দেখা যায় ওই ওয়ার্ডের প্রবেশমুখে আনসাররা খুব কড়াকড়িভাবে ডিউটি করছে। এই ওয়ার্ডে নবজাতক নিয়ে যারাই প্রবেশ ও বাহির হচ্ছে তাদের খাতার নাম, সময় ও ফোন নম্বর সব লিখে রাখা হচ্ছে। আনসারদের এই তৎপরতা দেখে অনেকেই বলতে থাকে, এই তৎপরতা যদি আগে থেকেই থাকতো তাহলে বাচ্চা চুরি হতো না। আবার অনেকে মন্তব্য করেন, আগে থেকেই এরকম নিয়ম ছিল। তারা দায়িত্ব অবহেলা করেছে।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক নার্সদের এক ইনচার্জ জানান, ওয়ার্ড থেকে নবজাতক চুরি হওয়ার দায়ভার সবাইকেই নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব থাকে যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল তাদের। দায়িত্বরতদের নবজাতককে নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বের হওয়া সবার কাগজপত্র চেক করার কথা। তাছাড়া আমরা সারাদিন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। আমাদের চোখে পড়লেও আমরা তখন বাধা দেই যে, বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন।
এছাড়া এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওয়ার্ডের ভেতর বেসরকারি অনেক মহিলা কাজ করে। এছাড়া মাঝেমাঝে নতুন নতুন কয়েকটি মহিলা দেখি কাজ করতে আসে। তবে তাদের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব আমার না। যারা সরদার তারা ভালো বলতে পারবে। এ ছাড়া ওয়ার্ড মাস্টার আছে, তিনিও ভালো বলতে পারবে।
আরও পড়ুন: ‘হাসপাতালে এত কড়াকড়ি, আমার ভাগ্নে চুরি হলো কেন?’
হাসপাতালে প্রশাসনিক ব্লকের ওয়ার্ড মাস্টার বাবুল জানান, ১০৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কেউ না কেউ বাচ্চাকে চুরি করে নিয়ে গেছে। এটা বাস্তব সত্য। তা না হলে কিভাবে গেল। ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ নাম চেয়েছে, ঘটনার দিন কারা কারা ডিউটিতে ছিল। আমার তরফ থেকে সেই নামগুলো দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ১০৬ ওয়ার্ডে অনেক স্পেশাল লোক কাজ করে। তাদের নামও সংগ্রহ করে দেওয়া হচ্ছে এবং কার তত্ত্বাবধানে তারা কাজ করে সেগুলো বের করা হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, পুরো হাসপাতাল জুড়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে আনসার সদস্যরা। প্রতিটা ওয়ার্ডের মুখে প্রতিটা প্রবেশপথে পাশাপাশি আলাদা গ্রুপ তৈরি করে আনসার সদস্যরা হাসপাতাল জুড়ে রাউন্ড দিয়ে থাকে। এত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও কিন্তু হাসপাতালে বিভিন্ন দালালরা প্রবেশ করছে। এত কড়াকড়ির মাঝেও কিভাবে হাসপাতালের ভেতর থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় নবজাতক চুরি হলো? এ দায়ভার কর্তৃপক্ষ বা আনসার সদস্যরা এড়াতে পারে না।
আরও পড়ুন: বের হওয়ার রাস্তা দেখে মনে হচ্ছে বড় চক্র: ঢামেক পরিচালক
সূত্র আরও জানায়, সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ঢাল সিঁড়ির পাশে পকেট গেট দিয়ে একজন মহিলা বাচ্চা নিয়ে বের হচ্ছে। এখন কথা হল, সেই গেটটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে। বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার সময় সে গেটটি কেন খোলা ছিল? সেখানে তখন কে দায়িত্ব ছিল?
এদিকে হাসপাতালে সদ্য যোগদান করা আনসার সদস্যদের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল জানান, যতটুক জানা গেছে ওয়ার্ডের গেটে দায়িত্ব ছিল মাসুদ ও পকেট গেটে ছিল বিল্লাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন হয়েছে তিনি নতুন যোগদান করেছেন। তার অধীনে হাসপাতালে পুরাতন ও নতুন ভবনের নিরাপত্তার জন্য ৩৫০ জন আনসার তিন শিফটে ডিউটি করে থাকে। এর মধ্যে ১৪ জন নারী সদস্যও আছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে পরিচালক স্যার নির্দেশ দিয়েছেন, ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো স্পেশাল নারী বা পুরুষ ডিউটি করতে পারবে না। এই কারণে আমরা প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছি।
আরও পড়ুন: শিশু কোলে হাসপাতাল ছাড়েন অজ্ঞাত নারী
হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, দম্পতির পক্ষ থেকে শিশু চুরির ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতরকম সহযোগিতা চাচ্ছে আমরা সহযোগিতা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় আমরা সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৩
এজেডএস/এসআইএ