ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কাস্টম হাউসের গুদামে ছিল না সিসি ক্যামেরা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩
কাস্টম হাউসের গুদামে ছিল না সিসি ক্যামেরা!

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদাম থেকে সোনা চুরির ঘটনায় সেখানে দায়িত্বরত ৪ সিপাহীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। ইতোমধ্যে তিনটি সংস্থার সিসি ক্যামেরা সংগ্রহ করা হয়েছে।

তবে গুদামের ভেতর কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদামের লকার সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে থাকায় চোর শনাক্ত করা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবু এই মামলার অভিযুক্ত অজ্ঞাতনামা আসামিদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ হেফাজতে নেওয়া রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাহীকে জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনো সন্তোষজনক তথ্য এখনও পায়নি পুলিশ। তবে এই চুরির ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা চলছে।

পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বিমানবন্দরের ভেতরে সব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। পুরো বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়া ও কাস্টমস হাউসের গুদামের ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক। কাস্টম কর্মকর্তাসহ বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কেউ এই চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলেও আমরা ধারণা করছি। তবে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই আমরা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, আমরা সোনা রাখার গুদাম ঘর পরিদর্শন করেছি। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা সিসিটিভির আওতায় ছিল না, বিষয়টি অবাক করার মতো। তাই কে বা কারা সোনা সরিয়েছে, তা স্পষ্ট করা যাচ্ছে না। গুদামঘর সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকলে বের করা সহজ হতো।

তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, গায়েব হওয়া সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এসব সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যাবার কথা, এখানে থাকাটা উদ্বেগজনক।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে গুদামের লকার ভেঙে ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরির ঘটনা ঘটে। ঢাকা কাস্টমস হাউস বলছে, চুরি হওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। চুরি হওয়া সোনার বারগুলো ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে জব্দ করা হয়েছিল।

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে
মামলার এজাহারে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেন্টিভ টিমের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন (৩৯) উল্লেখ করেন, বিমানবন্দর লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের গুদামের ভেতরে প্রবেশ করে তিনি দেখতে পান মূল্যবান পণ্য সংরক্ষণের জন্য গুদামে রক্ষিত একটি স্টিলের আলমারির দরজার লক ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের মতো দিবাগত রাতে আটক পণ্য জমা করে কাজ শেষে আনুমানিক রাত ১২টা ১৫ মিনিটে গুদামের তালা বন্ধ করে চাবি নিয়ে চারজন কর্মকর্তা একসঙ্গে বিমানবন্দর কাস্টমস এলাকা ত্যাগ করেন।

কাস্টমস শুদামের গুদাম কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা গত ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনারকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গুদামের স্টিলের আলমারির তালা ভাঙা রয়েছে বলে অবহিত করেন। এরপর গুদাম কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের দায়িত্বরত যুগ্ম কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সাথে সাথে তিনি বিষয়টি কাস্টমস হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন।

পরে যুগ্ম কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনাররা এবং ঢাকা কাস্টমস কমিশনার গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান এবং গুদামের পূর্বপার্শ্বের উপরের দিকে এসির বাতাশ বের হওয়ার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। শনিবার দিনগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারি, লকার ভেঙে স্বর্ণগুলো নিয়ে যান। শুল্ক বিভাগ বলছে, চুরি হওয়া এ স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।