ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকের একটি রাউটার ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা!

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩
লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকের একটি রাউটার ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ একটি রাউটার কেনা হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার পাঁচশ টাকায়।

অথচ বাজারে ভালো যেকোনো ব্র্যান্ডের সাধারণ একটি রাউটারের মূল্য ৫ থেকে সাত হাজার টাকা।

তা ছাড়া অপটিকাল ফাইবারের ক্রয় মূল্য দেখানো হয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। চারটি ডিজিটাল ওয়েটবোর্ডের মূল্য ৩ লাখ ৮০ হাজার; ১২টি কম্পিউটার কেনা হয় ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রিন্টারের দাম ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবের যন্ত্রাংশ বরাদ্দের তালিকা এটি। অভিযোগ উঠেছে, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম নিজ তত্ত্বাবধানে এ বিশাল অসামঞ্জস্য দেখিয়েছেন। প্রতিটি সরঞ্জামে ১০ থেকে ৯০ গুণ মূল্য দেখিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন মালামাল কেনে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এ কেনাকাটায় বিশাল দুর্নীতি করা হয়েছে, এমন অভিযোগ যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদক (চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর) সমন্বিত চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত পরিচালনা করা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মালামাল সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ লাখ টাকার দুটি বিলের কপি এসেছে বাংলানিউজের হাতে। এতে দেখা গেছে, মেসার্স জে এন্ড জে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে জে এন্ড জে’র প্রোপাইটর আবার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র ও যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম জেনী। তিনি সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

আরেকটি বিলের কপিতে দেখা গেছে, এসএআরএস টেকনিক্যাল সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২৩ লাখ টাকার মালামাল সরবরাহ করেছে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে। সেখানে টিপি লিংক ব্র্যান্ডের একটি রাউটারের দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা।

অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে নিয়ে সরবরাহকারী ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম কেনাকাটার অর্থ ভাগবাটোয়ারা করেন। এছাড়া কাগজপত্রে সরঞ্জাম টেন্ডারে দিলেও একাধিক মালামাল অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন।

এসব অভিযোগ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদাররা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেন্ডারে আহ্বানকৃত কাজগুলো সর্বনিম্ন ঠিকাদারকে না দিয়ে উচ্চ দর দাতাকে দেওয়া হয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়, যা পিপিআর বহির্ভূত।

তাদের অভিযোগ, সিরিয়ালে থাকা প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ অবস্থানে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার কাজ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, যারা টেন্ডার পায়নি, তারা কাগজপত্র বা বিভিন্ন ত্রুটির কারণে পায়নি। তারাই ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের টেন্ডার দরপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। এর আগে তারা (ঠিকাদার) আমার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিটও করেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমি জবাব দিয়েছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। সরঞ্জামের মূল্য বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য আছে।

দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জন্য গত অর্থ বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো বরাদ্দ ছিল। কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেব।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।