ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সার্ভার জটিলতায় ফেনীতে কমেছে জন্ম নিবন্ধন 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩
সার্ভার জটিলতায় ফেনীতে কমেছে জন্ম নিবন্ধন  জন্ম নিবন্ধন

ফেনী: জন্মসনদ প্রতিটি নাগরিকের প্রথম পরিচয় পত্র। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজন হচ্ছে জন্ম সনদের।

পাসপোর্ট এনআইডি ও ভোটার তালিকাসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৯ ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের জন্ম সনদ প্রয়োজন হওয়ায় বেড়েছে এর গুরুত্ব। তবে সার্ভার জটিলতায় জন্ম সনদ পেতে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। জেলা শহর ফেনীতে সার্ভার জটিলতায় জন্ম নিবন্ধন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।  

গত জুন-জুলাই এ দুই মাসে ৫ হাজার ৮০২ জনের জন্ম নিবন্ধন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সার্ভার জটিলতায় নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ২৬ জন।  

এর মধ্যে জুন মাসে ১ হাজার ৪০০ জন এবং জুলাই মাসে ১ হাজার ৬২৬জনের জন্ম নিবন্ধন করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একই সূত্র জানায়, মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দুই মাসে ১ হাজার ২৬৪ টার্গেট থাকলেও অর্জন হয়েছে মাত্র ৫০৩জন। এর মধ্যে জুন মাসে ২০৯ জন এবং জুলাই মাসে ২৯৪ জন। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিবন্ধন সম্পন্ন করতে না পারায় যেমন ভোগান্তি, তেমনি অন্যদিকে দিনে ৩০টি আবেদন করা যাবে এ মর্মে নির্দেশনা দিয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। যার ফলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হতাশায় রূপ নিয়েছে।

স্থানীর সরকার শাখা হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ফেনী পৌরসভায় জুন-জুলাই প্রতিমাসে ৩১৭ জন করে টার্গেট থাকলেও জুন অর্জন করতে পেরেছে মাত্র ৫৭ জন এবং জুলাই মাসে ৬৫ জন। একই চিত্র অন্যান্য পৌরসভাগুলোতে। সার্ভার সমস্যার কারণে বিগত অর্থ বছরের তুলনায় বর্তমানে ধীরগতিতে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না কোনো পৌরসভা কিংবা উপজেলা। ছাগলনাইয়া পৌরসভায় ৯১ জন টার্গেটের মধ্যে জুনে ১৮ জন এবং জুলাইতে ৫৫ জন। পরশুরাম পৌরসভায় ৬১ জনের মধ্যে জুনে ৩৫ জন, জুলাইতে ৩৩ জন। দাগনভূঞা পৌরসভায় ৬৪ জনের মধ্যে জুনে ১৭ জন, জুলাইতে ৩৪ জন। সোনাগাজী পৌরসভায় ৪০ জনের মধ্যে জুনে ৩২ জন, জুলাইতে ১৩ জন।

উপজেলার পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়, ফেনী সদরে ৭১৮ জন করে টার্গেট থাকলেও জুনে অর্জন হয়েছে ৩৩৪ জন এবং জুলাইতে ৩৬৭ জন। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে ছাগলনাইয়াতে ২৮৬ টার্গেটের মধ্যে  জুনে ৮১ জন এবং জুলাইতে ৮৮ জন। পরশুরামে ১৪৪ জনের মধ্যে  জুনে ১০৬ জন, জুলাইতে ১৪০ জন। দাগনভুঞাতে ৪৪৯ জনের মধ্যে জুনে ২৬৯ জন এবং জুলাইতে ৩৩৪ জন।  সোনাগাজীতে ৪৯০ জনের মধ্যে জুনে ৩১৮ জন এবং জুলাইতে ৩৬৬ জন। ফুলগাজীতে ২৪১ জনের মধ্যে জুনে ১২৪ জন এবং জুলাইতে ১৩১ জন অর্জিত হয়েছে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টার্গেটের চাইতে অনেক পিছয়ে আছে পৌরসভা ও উপজেলাগুলো। কোনো মাসেই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফেনী পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত দীপঙ্কর শীল বলেন, দিনের মধ্যে দেখা যায় একবার সার্ভার আসে বাকি সময় থাকে না। এতে কাজ করতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জনগণ মনে করে আমরা কাজ করছি না। কিন্তু সার্ভারের সমস্যা কেউ বুঝতে চায় না। সার্ভার জটিলতায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয় না।

জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার শাখা জানায়, একই সমস্যার কারণে উপজেলা ও পৌরসভার নিবন্ধক অফিসের টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করলেও এ জটিলতায় পিছিয়ে পড়েছে।


এছাড়া রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। সব মিলিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া সুবিধাভোগীদের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।

অন্যদিকে জন্ম নিবন্ধনে নাম, তারিখ, ঠিকানা বা বাবা-মায়ের নাম এসব ভুল সংশোধন করতে গিয়েও সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দিনের পরদিন ধর্না দিয়েও পাচ্ছেন না সমাধান। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করাতে প্রয়োজনীয় কাগজ বা অভিভাবককে নিয়ে যেতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও। এতে বেশি বিপাকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।  

এরই মধ্যে গত (২৭ আগস্ট) রোববার নতুন নিয়ম চালু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এখন থেকে ইউনিয়ন-পৌরসভা-ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০টি এবং জোন অফিসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০টি নিবন্ধনের সত্যতা যাচাই ও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার নাগরিকরা। ভুক্তভোগীরা তাদের নানান অভিযোগের কথা বলছেন।  

সায়েম উল্ল্যাহ নামে ঘোপাল ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা জানান, তিন দিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘুরে এসেছি কিন্তু কাজ হয়নি। যখনই যাই সার্ভার নেই। এভাবে চললে আমাদের যে প্রয়োজন সেটা মেটাবো কীভাবে। আমি ঢাকা গিয়ে কোচিং এ ভর্তি হবো, সেখানে জন্মসনদ লাগবে কিন্তু সার্ভার সমস্যার কারণে তা করতে পারছি না।

নিজামুল হক নামে আরেকজন বলেন, আগে সাধারণ মানুষ আবেদন করতে পারত এখন সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একে তো জন্মসনদ সব কিছুতে প্রয়োজন, অন্যদিকে সংশোধন করতে নানা নিয়ম নীতি। এগুলা সাধারণ মানুষকে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে দেওয়া তথ্যমতে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত জেলায় মোট জন্ম নিবন্ধন বিতরণ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৮২৬টি। যার মধ্যে ১৮ বছর বা তাহার নিচের মেয়ে শিশু ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৪ জন, ছেলে শিশু ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯০ জন। ১৮ বছরের ওপরের প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ৪ লাখ ৬২ হাজার ৩৯১ জন এবং পুরুষ ৫ লাখ ৬০ হাজার ৯৮৫ জন।

একই সূত্রে জানা যায় মৃত্যু সনদ বিতরণের সংখ্যা ৩২ হাজার ১২৫ জন। ১৮ বছর নিচের মেয়ে শিশু ৬৬ জন, ছেলে ৯১ জন। ১৮ বছরের ওপরে প্রাপ্ত বয়স্কদের নারী ৮ হাজার ৬৭৫ জন এবং পুরুষ ২৩ হাজার ২৯৩ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩
এসএইচডি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।