ঢাকা, রবিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মাটি দেবে গেছে খুলনা-মোংলা রেলপথের, পিছিয়ে যাচ্ছে উদ্বোধন

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
মাটি দেবে গেছে খুলনা-মোংলা রেলপথের, পিছিয়ে যাচ্ছে উদ্বোধন ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নির্বাচনী প্রচারে বাজিমাত করতে অক্টোবর মাসের মধ্যে আটটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে মাটি ধসে রেলপথ বেঁকে যাওয়ায় সংশয়ে পড়েছে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্প।

 এছাড়া রেল সংশ্লিষ্ট অন্য কয়েকটি প্রকল্পও রয়েছে নানা জটিলতায়। এক্ষেত্রে খুলনা-মোংলা রেলপথসহ অন্য প্রকল্পের উদ্বোধনও পিছিয়ে যাচ্ছে।

ভারতীয় অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে আখাউড়া থেকে আগরতলা এবং খুলনা-মোংলা রেলসংযোগ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উদ্বোধন করার কথা ছিল আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। তবে সেটি এখন না হওয়ায় চলছে দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করার চেষ্টাও। সেপ্টেম্বর থেকে পিছিয়ে এটার উদ্বোধন অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে কিংবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে।  

যদিও খুলনা-মোংলা রেলপথের এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১৩ বছর আগে, এরমধ্যে পাঁচবার সময় পরিবর্তন হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে খরচও।

এ রেলপথে আটটি স্টেশন নির্মিত হচ্ছে- ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাটী, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা রেলওয়ে স্টেশন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে, খুলনা থেকে মোংলা রেলপথ রূপসা নদী ও এর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে হওয়াতে কিছু অংশের মাটিতে সমস্যা রয়েছে। যার কারণে অনেক জায়গার মাটি দেবে যাওয়ায় রেলপথ সমান্তরাল ও ব্রিজ নির্মাণে সময় লাগছে।

এছাড়া বৃষ্টির কারণেও আটকে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের এ রেলপথের নির্মাণ। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগতে পারে আরও দুই মাসের বেশি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সম্প্রতি বাংলানিউজকে বলেন, অনেকে আগে থেকেই এই রেলপথের কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল। কিছু স্থানে রেল লাইন ও ব্রিজ নির্মাণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে রেলপথকে সমান্তরাল ও চলাচল উপযোগী করতে সময় লাগছে।  

সেই কর্মকর্তা সূত্রে উঠে এসেছে আরও কিছু তথ্য। তিনি বলেন, এখনও রেল লাইনের কাজ শেষ হয়নি। এছাড়া স্টেশনগুলো অরক্ষিত অবস্থায় আছে। আড়ংঘাটা স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা পিচ ঢালাই হয়নি। কাচের জানালা ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। রেললাইনে পাথর দেওয়া হয়নি ঠিকমতো। ট্র্যাকের সঙ্গে সংযোগ বাকি।  

অন্যদিকে, ফুলতলা দামোদর স্টেশনে আলাদা লাইন করা হয়েছে। লাইনের পাতে ঢালায়ের সঙ্গে ট্র্যাক লাগানো হয়নি। পাশেই পাথর স্তূপ করা হয়েছে। যেগুলো লাইনে দেওয়া হবে।

ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো। আর ট্র্যাক লিংকিং করছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।

ইরকন ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মী জানিয়েছেন, এই লাইনের প্রধান সমস্যা কয়েকটি ব্রিজে-৫, ৬ ও ৯ নম্বর ব্রিজে কাজ চলছে। সেখানে মাটির সমস্যা রয়েছে। এই প্রকল্পের লাইন যাচ্ছে বিলের মধ্য দিয়ে। এগুলো লতা, বরইতলা ও আরংঘাটা অংশে। এছাড়া গত দুই বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার সরঞ্জাম চুরি হয়েছে, যার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেশিরভাগই রেল লাইনের ক্লিপ। যার একেকটির দাম এক হাজার টাকা করে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দরে পণ্য পরিবহনে গতিশীলতা বাড়াতে এবং পার্শ্ববর্তী তিন দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য পরিবহনের কেন্দ্র করতে সরকার হাতে নিয়েছিল খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্প।

সমস্যা সমাধানে যা করছে রেলওয়ে
মাটি দেবে যাওয়া বা লাইন সমান্তরালের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, এগুলো সব পুরনো সমস্যা। এখন যেসব সমস্যা আছে তার মধ্যে বৃষ্টি অন্যতম। ফলে সময় নিয়ে রেলপথ সমান্তরাল ও মাটি, বালু, খোয়া দিয়ে মজবুত করার কাজ চলমান।

অগ্রগতির সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের ৯৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ কাজ কাজ শেষ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ বাধা পাচ্ছে। এতে করে এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না যে এটি অক্টোবরে উদ্বোধন হবে।  

সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, এই লাইনে কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে। যার কারণে উদ্বোধন পিছিয়ে যেতে পারে। এটি ঠিক করতে সময় লাগবে। তবে কবে নাগাদ ঠিক হবে সেই বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।

উদ্বোধন সম্পর্কে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নতুন সময়ের জন্য সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছি। উনি যেদিন সময় দেবেন সেদিন উদ্বোধন হবে।

আর উদ্বোধন দেরি হওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে এই বিষয়ে তখন কথা হয়। তাদেরকে বোঝানো হয়েছিল যে, এটি সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন সম্ভব হবে না। এখন অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ উদ্বোধনের জন্য ধরা হয়েছে।


 
মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে পাঁচ বার
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর। শুরুতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। তখন প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর সময় বাড়ানো হয়েছে পাঁচবার, আর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এতে করে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে ৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমবার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর তৃতীয় দফা আবারও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় তা চতুর্থ দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ পঞ্চম ধাপে মেয়াদ বেড়ে খুলনা-মোংলা রেললাইনের কাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তবে নির্মাণকাজ শেষ করার মেয়াদ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পর্যন্ত। বাকি এক বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ডিফেক্ট লায়বিলিটি পিরিয়ড হিসেবে ধরা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
এনবি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ