ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সাইবার নিরাপত্তা আইন সাংবদিকতায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
‘সাইবার নিরাপত্তা আইন সাংবদিকতায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে’

ঢাকা: সাংবাদিকদের আপত্তিগুলো উপেক্ষা করে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস করায় এই আইন স্বাধীন সাংবদিকতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করেছেন সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস হয়।

এই বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিতর্কিত জিডিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা এই আইনে যুক্ত করা হয়েছে। এটা অনেকটা নতুন বোতলে পুরনো মদ রাখার মতোই অবস্থা। আইনটি নতুন করে হচ্ছে, কিন্তু স্বস্তি ফিরে আসছে না। যেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছিল, অনেকটা হুবহু সেভাবেই এই আইন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের যেসব আপত্তি ছিল, উদ্বেগের বিষয় ছিল, সেগুলো রয়ে গেছে। ৯টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন প্রস্তাবিত সাইবার আইনে ৭টি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি।

তিনি বলেন, আইনটি ভিন্নমত, সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা দমনের সবচেয়ে কার্যকর একটি হাতিয়ার। গত সাড়ে ৪ বছরে কেবল সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা দমনে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই আইনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাংবাদিক কমিউনিটি। এই আইনের কারণে তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে। এই আইন পুলিশকে বাসাবাড়িতে প্রবেশ, অফিস ও দেহ তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সব কিছু জব্দ করার সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। অন্য কোনো আইনে পুলিশকে এত বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক বলেন, সাংবাদিকরা কলম ধরেন দেশের স্বার্থে। তাদের বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলকে যুক্ত করার সুযোগ ছিল। ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে।

জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আইনটিতে কিছু রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকেরা বলেছেন তারা সন্তুষ্ট নন। সংবিধানে বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান হলো মূল আইন। বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনো আইন তৈরি হলে তা হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার কাছে বিতর্কিত ছিল। কিছুটা পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। এটিও স্বাধীন সাংবদিকতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনে সাংবাদিকদের বিষয়ে আলাদা সুরক্ষা রাখা প্রয়োজন ছিল। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল। মতপ্রকাশ সাংবিধানিক অধিকার। এই আইনে মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতায় বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৭ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাদী ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কিছু কারিগরি বিষয়ে এই আইনের দরকার। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার হয়েছে খুব সামান্য। মূল মামলা হয়েছে চেতনা, অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে। সংবিধানে চিন্তা, সংবাদপত্রে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এগুলো থাকা অবস্থায় এই ধরনের আইন সংবিধানবিরোধী। এই আইনে অপরাধের সংজ্ঞা একই রাখা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে সাজা কমানো হয়েছে। এই আইনে গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।