ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জিআই তালিকায় নেই কুমিল্লার খাদি-রসমালাইয়ের নাম

তৈয়বুর রহমান সোহেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
জিআই তালিকায় নেই কুমিল্লার খাদি-রসমালাইয়ের নাম সংগৃহীত ছবি

কুমিল্লা: বাংলাদেশের মোট ১৭টি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেলেও তালিকায় এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের নাম।  

সর্বশেষ স্বীকৃতি পায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা।

এ তালিকায় খাদি ও রসমালাইয়ের নাম না থাকায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিলে এ দুইটি পণ্য জিআইয়ের স্বীকৃতি পেতে পারে বলে তাদের অভিমত।

সূত্র জানায়, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর থেকে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রথম পণ্য হিসেবে জামদানি জিআইয়ের স্বীকৃতি পায়। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট ইলিশ, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি খিরসাপাত আম, ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মসলিন, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী সিল্ক, শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও বিজয়পুরের সাদা মাটি, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল বাগদা চিংড়ি, রাজশাহীর ফজলি আম, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম এবং ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুমিল্লার রসমালাইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন কুমিল্লার সাবেক এক জেলা প্রশাসক (ডিসি)। আবেদনটি ডিসি তার ব্যক্তি উদ্যোগে করেন। যেহেতু রসমালাই কুমিল্লার পণ্য, তাই শুধুমাত্র মাতৃভাণ্ডারের রসমালাইকে এককভাবে না নিয়ে কুমিল্লার রসমালাইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। আবেদনে প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু কাগজপত্রের দরকার হয়। ওই ডিসি একটি একটি পণ্যকে ধরে আগাতে চেয়েছেন, সে কারণে জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে খাদির নামে কোনো আবেদন করা হয়নি। তাছাড়া জিআইয়ের স্বীকৃতিপ্রাপ্তি একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। এছাড়া রসমালাই শুধুমাত্র কুমিল্লার পণ্য এটা নিয়ে বিতর্ক না থাকলেও খাদি কুমিল্লা বা বাংলাদেশের মৌলিক পণ্য কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

তবে কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, খাদি ও রসমালাই কুমিল্লার মৌলিক পণ্য। এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। ১৯২৩ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক দেন। সে সময় ভারতীয় উপমহাদেশে মোটা কাপড় পরিধান ও মোটা ভাত খাওয়ার আওয়াজ ওঠে। সে সময় খাদি কাপড় বানানোর প্রতিযোগিতা জোরদার হয়। ওই সময় ভারতেও খাদি কাপড় তৈরির হিড়িক পড়ে। কুমিল্লায় খাদি কাপড় তৈরির ইতিহাস কমপক্ষে ১ হাজার বছরের পুরোনো। পূর্বে কুমিল্লার মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও বুড়িচংয়ের ময়নামতি এলাকায় খাদি কাপড় বানানো হতো।  রসমালাইও কুমিল্লার নিজস্ব পণ্য। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রসমালাই তৈরি করেন কুমিল্লার মানুষ।

তিনি বলেন, জিআই পণ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এবং কুমিল্লার জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে। তাহলে কুমিল্লার খাদি ও রসমালাই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বেগ পেতে হবে না।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানেজার বদরুল হুদা জেনু বলেন, কালের বিবর্তনে ভারতে খাদি কাপড় তৈরিতে বেশ বৈচিত্র্যতা এসেছে। তারা কচুরিপানা, বাঁশ, তুলা ছাড়াও আরও নানা কাঁচা পণ্য দিয়ে খাদি কাপড় বানান। তাদের হ্যান্ডলুম মেশিনগুলোও অত্যাধুনিক। বিপরীতে কুমিল্লায় অল্প কয়েকটি পরিবার শুধুমাত্র তুলা দিয়ে বর্তমানে খাদি কাপড় তৈরি করছেন। কুমিল্লায় খাদি কাপড় তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। কোনো একটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কিছু ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার দরকার হয়, যেমন- ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড, ইকোনমিক্যাল ভ্যালু ইত্যাদি। কিন্তু কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মানসিকতা কারও মধ্যে নেই। কোনো পণ্যকে ব্র্যান্ডিং করার প্রকল্প চালু হলে জেলা প্রশাসকরা নড়েচড়ে বসেন।  

অন্যথায় তারা এসব নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করেন না। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের জিআই স্বীকৃতি পেতে খাদিকে করতে হবে আধুনিক, রসমালাইয়ের জন্য দরকার জোর প্রচেষ্টা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, মানুষের রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। কুমিল্লার খাদিকে সময়োপযোগী করার প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাই ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া দুঃখজনক।
কুমিল্লার ডিসি খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, এ দুইটি পণ্যের ব্যাপারে খোঁজ নেব। তারপর পরবর্তী সময়ে কী করণীয়, সেটা নির্ধারণ করব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।