ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অভিযানেও কমছে না খুলনার ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের কারসাজি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
অভিযানেও কমছে না খুলনার ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের কারসাজি

খুলনা: একের পর এক অভিযানেও খুলনায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোগ্য পণ্য।

গুদামগুলোয় মিলছে অবৈধ মজুত।

অভিযানে অবৈধ মজুত রাখা, বেশি মুনাফার আশায় অযৌক্তিক দামে বিক্রি ও লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করাসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসছে।

সরকার একটি ডিম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এসব পণ্য সেই দামে মিলছে না। এতে করে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

মহানগরীর বড় বাজার, সান্ধ্য বাজার, গল্লামারীসহ বেশ কিছু বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে ভোগ্যপণ্য কেনাই যাচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনে কমে বিক্রি করা সম্ভব না।

গল্লামারী বাজারের ক্রেতা নিয়ামুল বলেন, বাজারে অগ্নিমূল্য। সরকারের নির্ধারিত দামে আলু, ডিম ও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।

একই সুরে এম রহমান নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, সরকার আলুর প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজার থেকে কিনলাম ৫০ টাকা কেজি।

তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। তেল থেকে শুরু করে সবজির দাম নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অচিরেই অনেককেই অনাহারে বা অর্ধাহারে দিন কাটাতে হতে পারে।

ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের ক্রেতা অ্যাডভোকেট হেলাল হোসেন বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে কোনো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা যেমন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, তেমনি ভোক্তারাও ন্যায্য মূল্যে কোনো পণ্য কিনতে পারছেন না।  বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতার বলি হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা। এর মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানির খবর মাছের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আমরা আমজনতা বাজারে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।

নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ছাড়াও সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নাম দিয়ে ভেজাল, রাসায়নিকযুক্ত উপাদান বিক্রি করা হচ্ছে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ও মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) পৃথক ২ অভিযানে খুলনায় ৭০৫ কেজি ভেজাল মধুসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এরপরও গোপনে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মধু তৈরি করে বিক্রি করছেন।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ায়ের অধীনে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় প্রতিনিয়ত খুলনার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অভিযানের পর আবারও অধিক মূল্য হাকান ব্যবসায়ীরা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনেক বেপরোয়া। আমরা যতক্ষণ থাকি ততক্ষণ কোনো সমস্যা হয় না। আমরা চলে যাওয়ার পর আবার একই অবস্থা হয়ে যায়। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু আছে আমরা চেষ্টা করছি বাজার ঠিক করার।

খুলনা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি বাংলানিউজকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করাতে আমরা চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। কোল্ড স্টোরেও আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে মালিকের কোনো আলু নেই। মালিক শুধু কোল্ড স্টোর যারা ভাড়া নিয়েছে তাদের কাছ থেকে চার্জটা রাখে। বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কিনে আনছে। সরকারের নির্ধারিত দামের আলু এখনও না পাওয়া গেলেও পেঁয়াজের দাম কাছাকাছি এসে গেছে। পেঁয়াজ ছিল ৮৫-৯০ টাকা, যা এখন কমে হয়েছে ৭০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ এখন ৬৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসনের তিনটা মোবাইল কোর্ট অথবা ভোক্তা অধিকারের লোক নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন অভিযান করেছে ৩ দিন। শহরের মধ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় যার কারণে বেশি দাম রাখতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। তবে শহর থেকে দূরে বেশি দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
এমআরএম/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।