ঢাকা: কোনো আধিপত্যবাদী প্রভাবে না পড়ে চীন ও ভারত উভয় দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য-বিনিয়োগের সুযোগকে কাজে লাগানো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআইয়ের ১০ বছর পূর্তিতে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার চীনা দূতাবাসের উদ্যোগে 'বাংলাদেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ: অ্যাচিভমেন্টস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনটি ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নেওয়া বিআরআইয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এতে বাংলাদেশের ওপর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব তুলে ধরে বলা হয়, সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বহুমুখীতার উত্থান বিশ্ব ক্ষমতা কাঠামোকে নতুন আকার দিচ্ছে, যার মধ্যে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক খেলোয়াড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক মেরু বা দুই মেরুর বৈশ্বিক শৃঙ্খলা থেকে বহু মেরুতে এই রূপান্তর অনিবার্যভাবে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে উচ্চতর প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়। যদিও এই অর্থনৈতিক বড় শক্তিগুলো প্রতিযোগী, কিন্তু তারা সবাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিনিয়োগের সম্ভাব্য উৎসও।
অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে এই বর্ধিত প্রতিযোগিতা সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই উপস্থাপন করে। ইতিবাচক দিক থেকে বর্ধিত প্রতিযোগিতা আরও অনুকূল বিনিয়োগ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, কারণ এই শক্তিগুলো কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের জন্য লড়াই করে। অন্যদিকে বর্ধিত ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে মাঝপথে ফেলে দিতে পারে, যার ফলে স্বাধীন অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক পথে চলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও বিআরআই প্রকল্পগুলো বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সংযোগের অগ্রাধিকারের সঙ্গে একই সারিবদ্ধ। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বর্ধিত আঞ্চলিক সংযোগ এবং বিআরআই দ্বারা সহজলভ্য বাণিজ্য প্রবাহ থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
দ্বিতীয়ত, অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের দক্ষতা এবং সম্পদ বাংলাদেশের উন্নয়ন এজেন্ডার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তৃতীয়ত, বিআরআই বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে শিল্পায়ন বাড়াতে পারে এবং উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অবদান রাখতে পারে। বিআরআই প্রকল্পগুলো বিবেচনা করে যে, বাংলাদেশ একচেটিয়াভাবে চীনের সঙ্গে সারিবদ্ধ নয় বরং একাধিক বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার একটি বিস্তৃত নীতির অংশ। তদুপরি অবকাঠামো এবং সংযোগের উন্নতির মাধ্যমে বিআরআই প্রকল্পগুলো প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ব্যয় কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সুতরাং ভূ-রাজনৈতিক সূক্ষ্মতা স্বীকার করার সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য বিআরআই প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাব্য সুবিধাগুলোও অনস্বীকার্য। যদিও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যায় না, তবে কিছু কিছু জিনিস রয়েছে, যা বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এবং বিআরআইসহ সব উৎস থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে সুবিধা লাভ করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বহুপাক্ষিক পর্যায়ে বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নীতি নিরীক্ষণ করা, একটি স্বচ্ছ, নিয়ম ভিত্তিক ব্যবস্থার প্রচেষ্টা চালানো, আর এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা। আঞ্চলিকভাবে বাণিজ্য এবং সংযোগের মাধ্যমে সমৃদ্ধি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কোনো আধিপত্যবাদী প্রভাবে না পড়ে চীন ও ভারত উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগকে পুঁজি করা গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং ভূ- রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাতে এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ণ না করে, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের উচিত অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও কাজ করা।
উন্নত সংযোগ ও বাণিজ্যের পক্ষে আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি প্রকল্পের স্বতন্ত্র যোগ্যতার ওপর ফোকাস রেখে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশের একটি খোলা মনের অবস্থান নেওয়া উচিত। সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রকল্পের পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন, সম্ভাব্য রপ্তানি মুনাফা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
টিআর/এসআইএ