বগুড়া: বগুড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে হাবিবুর রহমান (৩৫) নামে এক আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ৷
বুধবার (০৪ অক্টোবর) বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট ইনটেলিজেন্স অফিসার-১ (ডিআইও) জি এম সামসুন্নূর।
নিহত হাবিবুর রহমান বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে। তিনি বগুড়া বার সমিতির সিনিয়র সদস্য মঞ্জুরুল হকের সহকারী ছিলেন ৷
জানা যায়, মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে আদালতের বাইরে থেকে হাবিবুর রহমানকে আটক করা হয় ৷ পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ রাত পৌনে ৯টার দিকে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দুপুরে হাবিবের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় আইনজীবী সহকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। নিহতের স্বজন ও তার সহকর্মীদের অভিযোগ, তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ।
বগুড়া ডিবি পুলিশ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১০ বছর আগে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামে বিপুল নামে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হাবিবুর রহমান ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। নিহত কিশোরের সৎ মা খুকি বেগম ওই হত্যা মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। কিন্তু সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতের ধার্য তারিখের আগেই গত ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর ৪ আগস্ট খুকি বেগমের একটি পা বিহীন মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) মনোয়ারা বেগম নামে প্রতিবেশী এক নারীর বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে খুকি বেগমের খণ্ডিত পা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনোয়ারা বেগমকে আটক করা হলে তিনি খুকিকে হত্যায় হাবিবের জড়িত থাকার তথ্য দিয়ে জানান, তার সামনেই হাবিবসহ কয়েকজন খুকিকে হত্যা করে। মনোয়ারা বেগমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হাবিবকে মঙ্গলবার বিকেলে আটক করা হয়। পরে ডিবি অফিসে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখি করা হলে হাবিবুর রহমান বুকে ব্যথার কথা বলেন। পরে তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ময়নাতদন্তের বিষয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, তারা পরীক্ষার জন্য মরদেহের হৃদযন্ত্র সংরক্ষণ করেছেন। পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলা যাবে না।
এর আগে হাবিবের স্বজন ও পুলিশের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রায়হানুল ইসলাম মরদেহের সুরতহাল করেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, হাবিবের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। হাবিবের মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ ওঠায় ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৩
আরএ