বরিশাল: ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীর গর্ভপাত ঘটতে গিয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বিচার দাবি করে এরইমধ্যে মৃত কিশোরীর বাবা বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
তবে মামলা দায়েরের আগেই মৃত্যুর খবর শুনে কথিত প্রেমিক শাকিল গাজীসহ তিন আসামিই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাকেরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, পালিয়ে গেলেও তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এছাড়া আজ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃত ওই কিশোরীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মৃত ফাতেমা আক্তার মিম বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের বাসিন্দা ও দিনমজুর ওমর ফারুকের মেয়ে। পাশাপাশি সে স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
কিশোরীর দিনমজুর বাবা ওমর ফারুক জানান, মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতো পার্শবর্তী ফরিদপুর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত রাজ্জাক গাজীর ছেলে শাকিল গাজী (২৩)। মাস চারেক আগে মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে অন্য সবাই বরিশালে যান। আর তখনই সুযোগ বুঝে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার মেয়েকে ধর্ষণ করেন শাকিল।
তিনি জানান, এতে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শাকিলকে বিষয়টি জানায়। আর শাকিল তার ভাবির মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালিশুরী বাজারের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় ভিকটিমকে। পরে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে গর্ভপাত করানোর পাঁয়তারা শুরু করে। যে কারণে শাকিল ও তার বড়ই ভাইয়ের বউ ও বোন ইয়াসমিন মিলে মেয়েকে চাপ দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, গর্ভপাত করানোর জন্য শাকিল ও তার স্বজনরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করায়। এতে আমার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পুনরায় কালিশুরীর ওই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়।
এদিকে ফাতেমা আক্তার মিমের মা জানান, শারীরিক পরিবর্তন দেখে তাদের সন্দেহ হলে মেয়ের কাছে কি হয়েছে জানতে চান। তখন মেয়ে সবকিছু জানালে, শাকিল গাজীকেও জিজ্ঞাসা করি, তখন সেও অপরাধের কথা স্বীকার করে।
এদিকে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও অভাবের কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেনি জানিয়ে স্বজনরা বলেন, বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়, তবে শাকিলের বড় ভাই জাফর গাজী ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
যদিও শাকিলের স্বজন ও ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পরপরই তিনি ওই মেয়েকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর এর থেকে বেশি কিছু তার জানা নেই। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি জানার পরপরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন ভিকটিমের পরিবারকে।
আর থানা পুলিশ বলছে ভিকটিমের বাবার দায়ের করা মামলায় ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তবে স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, মামলা দায়েরের আগেই শাকিল ও তার ঘনিষ্ট সহযোগী স্বজনরা ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৩
এমএস/আরআইএস