ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গোৎসবকে ঘিরে পাবনায় ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মুস্তাফিজুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৩
দুর্গোৎসবকে ঘিরে পাবনায় ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

পাবনা: বাঙালি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসবকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা।

 

জেলার প্রতিটি মন্দিরে শিল্পীর নিপুণ হাতে মাটির ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দেবী দুর্গাসহ প্রতিমা। বৈরী আবহাওয়া ও সময় স্বল্পতার কারণে দিনরাত পরিশ্রম করছে শিল্পীরা। মাটির কাজ শেষ হলেই শুরু হবে রং ও  সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিশ্রম অনুযায়ী শ্রমের মূল্য পাচ্ছেনা শিল্পীরা।

এবার দেবীদুর্গা মর্ত্যে আসবেন ঘোড়ায় চেপে যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। দেবীকে বরণ করে নেওয়া জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন জেলায় বসবাসরত সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় ভক্তরা।  

বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় ঐতিহ্য শারদীয় দুর্গোৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলা প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। বাঁশ, কাঠ, চট, বোর্ড আর খড় দিয়ে শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে দেবীদুর্গা। রথ যাত্রার পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শারদীয় দুর্গা উৎসবের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিগত বছরের চাইতে এই বছরে প্রতিমা তৈরিতে গুনতে হচ্ছে বর্ধিত অর্থ।  

জানা গেছে, এই সপ্তাহের শেষদিকে মাটির আঁচড়ের কাজ শেষ হলেই শুরু হবে রং ও দেবী দুর্গার সাজসজ্জার কাজ। জগন্নাথের রথযাত্রা ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর দিন থেকেই দেবী দুর্গার কাঠামো তৈরির কাজ শুভক্ষণ করে থাকেন সনাতনী ধর্মের অনুসারীরা। আগামী ১৪ অক্টোবর পূজার প্রথম পর্ব শুভ মহালয়ার মধ্যদিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এর ঠিক ছয়দিন পরে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গা আসনে বসবেন।

প্রতিমা শিল্পী শ্রী ধনজ্বয় পাল ধুন বলেন, দ্রব্যমূল্যে যে হারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সেই তুলনায় শিল্পীদের সম্মানী বৃদ্ধি পায়নি। বিগত বছরের মতই এবারো কম মজুরিতে প্রতিমা তৈরি করতে হচ্ছে। সময় স্বল্পতার কারণে দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ শেষ করতে হবে। সারা বছর অপেক্ষায় থাকি এই উৎসবের জন্য। কারণ প্রতিমা তৈরি করেই আমাদের সংসার চলে। নারী পুরুষ সবাই মিলে প্রতিমা তৈরির কাজ করতে হয়। আমরা নামেই শিল্পী কাজ শেষ হলে আমাদের আর দাম নেই। কর্তৃপক্ষের উচিত শিল্পীর মজুরির দিকে নজর দেওয়া।

শ্রী শ্রী জয়কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি প্রলয় চাকি বলেন, সারদীয় দুর্গোৎসব শুধু সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উৎসব নয়, এটা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য। এই উৎসবে আমাদের প্রশাসনসহ সব ধর্মের মানুষ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহযোগিতা করে থাকেন। এবারের উৎসব বিগত বছরের চাইতে আরো সুন্দর হবে যদি রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো থাকে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৈদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনয় জ্যোতি কুন্ডু বলেন, উৎসব অবশ্যই আনন্দের হয়ে থাকে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙার খবরে একটু চিন্তা হচ্ছে। কিছু মানুষ রয়েছে যারা আমাদের সম্প্রীতির সম্পর্ক নষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। অন্যদিকে বর্তমান বাজার অবস্থায় বিগত বছরের চাইতে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে একটু কষ্টকর হয়ে পরেছে উৎসবের আয়োজন করতে। তবু করতে হবে এটা আমাদের প্রাণের ও ধর্মের সবচাইতে বড় উৎসব।

শ্রী শ্রী জয়কালীবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত শ্রী প্রাপ্ত মৌত্র বলেন, এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে দেবী দুর্গো মর্ত্যে আসবে ঘোড়ায় চেপে যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। দেবী দুর্গার আগমনে সব কালোমেঘ দূর হয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। দেবীর আগমনে আমাদের সবার জীবনে প্রশান্তি বয়ে যাবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।

এই বছর জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩৬২টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। এর মধ্যে জেলা সদরে প্রায় ৫২টি মন্দির রয়েছে। প্রশাসনিক কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলছে উৎসবের কার্যক্রম। তবে আসন্ন নির্বাচন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন আয়োজকেরা। সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরি করতে কিছু মানুষ সমব সময় চেষ্টা করেছে। তবে সব বাঁধা অতিক্রম করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উৎসব করতে চান তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।