ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে সাইদ গ্র্যান্ড সেন্টারে গভীর রাতে লাগা অগ্নিকাণ্ডে ভবনের ৪টি ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনটি ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
কী কারণে এই আগুনের সূত্রপাত জানাতে পারেননি কেউ।
তবে ঘটনাস্থলে থাকা ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ বলছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুনের ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর নেই। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রয়েছে। মূলত কী কারণে এই আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। এদিকে, অগ্নিনির্বাপণে অংশগ্রহণকারী ২ জন ফায়ারফাইটার আহত হয়েছেন।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে ঘটনাস্থলে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত সাইদ গ্র্যান্ড সেন্টারের লিগ্যাল অ্যাডভাইজর আরিফুল ইসলাম টিপু বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১টার দিকে আগুন লাগার সাথে সাথে আমরা এখানে এসেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমরা আগুনের সূত্রপাত জানতে পারিনি। সরকারের বিভিন্ন ইউনিটের যদি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়, তাহলে হয়ত মূল ঘটনা আমরা জানতে পারব।
তিনি বলেন, ভবনের ৭ থেকে ১১তলা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে গার্মেন্টসের বায়িং হাউজের অফিস রয়েছে, রেস্টুরেন্ট রয়েছে, এলিট পেইন্টের অফিস রয়েছে। এছাড়াও আরও কিছু অফিস রয়েছে।
আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। প্রত্যেক অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভেতরে যাচ্ছেন, ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা দেখছেন। সবমিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার ১৬তলা ভবনের ৭ম, ৮ম ও ৯ম তলায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও ১০ম ও ১১ তম তলার অর্ধেক অংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে, ভবনের ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ বলছেন, ভবনে ৮ম তলায় থাকা রেস্তোরাঁ ক্যাফে রিও থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আবার কেউ কেউ বলছে ভবনের ৭ তলার এলিট পেইন্টের অফিস থেকে আগুনের সূত্রপাত।
আবার অনেকেই বলছেন ভবনের পূর্ব পাশে ৭ম তলার বাইরে আউটার সাইনবোর্ডে শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে কেউ আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি।
ভবনের ৭ তলার এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা মো. রাহাত বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ফ্লোর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখান থেকে কোনো কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর পর সকাল ৯ টায় আমরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছি। ভেতরে ঘুরে দেখেছি৷ সব পুড়ে গেছে।
তিনি দাবি করেন এই আগুনের ঘটনায় সবমিলিয়ে আনুমানিক ৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
ভবনের ১০ তলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান মাসকো গ্রুপ লিমিটেড এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস) ফারহাদ ইবনে রওশন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ১০ তলা, ১২, ১৩ ও ১৪ তলায় অফিস। ১২, ১৩, ১৪ তলায় আগুন পৌঁছাতে পারেনি, তবে ১০ তলার অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ফ্লোরে আমাদের রেভিনিউ বিভাগ। আগুনে আমাদের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও ডকুমেন্টস পুড়ে গেছে৷
তিনি বলেন, আমি কিছুক্ষণ ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোর থেকে ঘুরে এসেছি। এখনও ভেতরে অনেক তার রয়েছে। বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। অফিসে ভেতরে যে সব মালামাল অক্ষত রয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে আমরা বের করে আনছি।
ভবনের ৮ তলায় রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ ক্যাফে রিও। আগুনের ঘটনায় রেস্তোরাঁর সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে রেস্তোরাঁর রান্নাঘর অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ক্যাফে রিও রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আকরাম হোসেন টিটু বাংলানিউজকে বলেন, আগুনে রেস্তোরাঁর সব পুড়ে গেছে। এই রেস্তোরাঁয় ৪০০ লোকের এক সঙ্গে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আগুনে রেস্তোরাঁ চেয়ার-টেবিলসহ এসি, টিভি, ফ্রিজ সহ সম্পূর্ণ ডেকোরেশন পুরে ছাই হয় গেছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে রান্না ঘরে আগুন পৌঁছতে না পারায় সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি দাবি করে করেল সব মিলিয়ে ৫ কোটি টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনের ৭ তলায় এলিট পেইন্টের অফিস তাদের আউটার সাইনবোর্ডে শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ হয় রাত ১০ টার মধ্যে। রেস্তোরাঁ বন্ধ করে যাবার আগে আমরা বৈদ্যুতিক লাইনের সার্কিট বন্ধ করি। সেই সঙ্গে রান্নাঘরের গ্যাসলাইন বন্ধ করে পরে সব কিছু বন্ধ করা হয়। যেহেতু আমাদের রেস্তোরাঁর রান্নাঘর অক্ষত রয়েছে আর বৈদ্যুতিক লাইনও বন্ধ ছিল। তাই আমি বলতে পারি ক্যাফে রিও রেস্তোরাঁ থেকে কোনোভাবেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বাংলানিউজকে বলেন, সাইদ গ্র্যান্ড সেন্টার ভবনটি মূলত একটি বাণিজ্যিক ভবন৷ সেখানে রেস্টুরেন্ট, অফিস, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান, রংয়ে কোম্পানি অফিস, কম্পিউটারের দোকানসহ নানা রকম শোরুম ও অফিস রয়েছে। ভবনের আগুনের সূত্রপাত কী সেটা তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দিনগত রাত ১ টা ১৮ মিনিটে সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টারে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২২ টি ইউনিট কাজ করে। ভোর ৪ টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণরূপে নেভানো সম্ভব হয়। এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর নেই। আগুন নেভানোর পর ভবনের ডাম্পিং এর কাজ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ