ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘ছেলের হত্যা মামলা আপস করতে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব আসে’ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
‘ছেলের হত্যা মামলা আপস করতে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব আসে’ 

সিলেট: সিলেটের পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যা মামলাটি তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে বুধবার (১১ অক্টোবর)। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এ মামলার ধার্য তারিখে আদালতে এসে ‘বোমা ফাটালেন’ রায়হানের মা সালমা বেগম।

সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে বলেন, স্থানীয় সিসিকের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান ও বিএনপি নেতা প্রয়াত শওকতের মাধ্যমে হত্যা মামলা আপস করতে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব এসেছিল। সেটা তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। যদিও কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান এটা অস্বীকার করেছেন।

এদিন সিলেট মহানগর দায়রা জজ এ কিউ এম নাসির উদ্দিনের আদালতে মামলার ধার্য তারিখে এক সাক্ষীর জেরা অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, ‘শুরু থেকেই মামলা তুলে নিয়ে আপস করার জন্য আসামিরা নানাভাবে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এবং টাকার প্রলোভন দিয়ে আসছেন। বছরখানেক আগে মখলিছুর রহমান কামরান ও বিএনপি নেতা শওকত জীবিত থাকাকালে তার মাধ্যমেও ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেন আসামিরা। আমরা তাতে রাজি হইনি। ’

এক বছর পরে এসে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সময়ের মধ্যে কোনো সাংবাদিক আমার কাছে আসেননি। ওই সময় জেলগেটেও আসামিদের সঙ্গে দেখা হলে রায়হানের চাচাকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি। ’

অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, ‘রায়হানের মায়ের এমন বক্তব্য সঠিক নয়। রায়হান হত্যার সঠিক বিচার হোক, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমিও চেয়েছি। শুনেছি ওসমান আলীর ছেলে শওকতের মাধ্যমে এ প্রস্তাব দিয়েছিল আসামিরা। এরইমধ্যে শওকতও মারা গেছেন। তিনি কোনো আপস প্রস্তাব করেননি। ’

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মাঝরাতে সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হানকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের অভিযোগ ছিল, পুলিশের নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছিল। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পান।

ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন।  

অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।

অন্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)। গত বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমান এখনো পলাতক। বাকি চার আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করেছে।

বর্তমানে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার মোট সাক্ষী ৬৯ জন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ এ কিউ এম নাসির উদ্দিনের আদালতে আসামি কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) মো. হারুন অর রশিদ পক্ষের আইনজীবী হত্যা মামলার সাক্ষী বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরা করেন। এ সাক্ষী আগেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। হারুন অর রশিদের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আবার তাকে জেরা করা হয়।

রায়হান হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাক্ষী ৬৯ থাকলেও মারা যাওয়া ও বিভিন্ন কারণে কয়েকজন কমে গেছেন। সাক্ষী যারা বাকি রয়েছেন- তারা চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট। আশা করছি, তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং বিচারপ্রক্রিয়া শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।