ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উখিয়ায় আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ২ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
উখিয়ায় আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ২ 

কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির থেকে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড, রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর  হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান স্যালবেশন আর্মি আরসার শীর্ষ কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বী (৫০) ও মো. ইউনুসকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।  

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

এ সময় তাদের টর্চার সেল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি একনলা বন্দুক, দুটি এলজি, নয় রাউন্ড গুলি, ১২ বোর কার্তুজ ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।  

খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার সালমান ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে থাইংখালীর ১৩ নম্বর ক্যাম্পের ডি/৪ ব্লকে বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালে আরসায় যোগ দেন। নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের পক্ষের রোহিঙ্গাদের বিচারের নামে টর্চার সেলে নির্যাতন চালানো হতো এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের অপহরণ করে সেখানে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হত। এর নেতৃত্বে ছিলেন সালমান।  

এছাড়া এ সালমান গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা, হেড মাঝি আনোয়ার, সাব মাঝি ইউনুচ, জসিমসহ ১৩ নম্বর ক্যাম্পে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানান তিনি।

র‌্যাব এ পর্যন্ত কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক, মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান ও ক্যাম্প কমান্ডারসহ ৭৩ জন আরসার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে (২৬ অক্টোবর) র‌্যাব-১৫ এর একটি অভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকায় অভিযান চালায়। প্রথমে আরসার শীর্ষ কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান মো. ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের মধুরছড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পাহাড়ে আরসার তৈরি একটি গোপন টর্চার সেলে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে টর্চার সেলের সদস্য  ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত সালমান ২০১৭ সালে সপরিবারে অবৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাইংখালীর শরণার্থী ক্যাম্প-১৩ এর ব্লক-ডি/৪ এ বসবাস শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে সে আরসার ওলামা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ও কমান্ডার মৌলভি মোস্তাক আহম্মদ এবং মৌলভি আবু রায়হানের হাত ধরে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ আরসায় যোগ দেন।

সংগঠনে যোগদানের পর আরসার শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। পর্যায়ক্রমে তিনি ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ওলামা বডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে শরণার্থী শিবিরে আরসার দাওয়াত গ্রুপের অন্যতম সদস্য মৌলভি লাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়। যারা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী তরুণ ও যুবকসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা জোরপূর্বক আরসায় যোগদান করাতেন। তার এ কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা আরসায় যোগদান করেছে বলে জানা যায়।  

র‌্যাব জানায়, এ কাজের জন্য তিনি প্রতি মাসে আরসা হতে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন এবং তার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওলামা বডির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নির্ধারিত টাকা আসত।

সালমানের পরামর্শেই রোহিঙ্গা শিবির ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হামলাসহ যেকোনো ধরনের নাশকতা চালানো হত জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন সালমান।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
এসবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।