ঢাকা: নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং নোট-গাইড ব্যবসায়ী ও কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষক এর সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজটি করছেন বলেও শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ।
রোববার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২৩ এর ওপর আনা বিরোধী দলের সদস্যদের সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় তাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এসব অভিযোগ করেন । এ বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর দেওয়া বক্তব্যে বিরোধী দলের সদস্যরা নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তার বক্তব্যে বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি রাখা হয়নি, একেবারেই সত্য নয়। আগে কেবল ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা হতো, বরং এখন ধারাবাহিক মূল্যায়ন হয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থী কী শিখছে, সে কেমন করে শিখছে, সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে কি না, সবকিছুর মূল্যায়ন হয়। সেই মূল্যায়নের জন্য অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা সহজেই কাজটি করতে পারবেন। এখন ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে বলে একটু সমস্যা হচ্ছে। নতুন যেকোনো কিছু নেওয়ার ক্ষেত্রে তো অনেক রকম রেজিস্ট্যান্স থাকে, যার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন গুটি কয়েক অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক গুগল থেকে দিচ্ছে। কেবল বই নয় এখন নানারকম সোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য নেবে। সেগুলো নিয়ে গ্রুপ ওয়ার্ক করবে এবং উপস্থাপন করবে।
তিনি বলেন, বিশ্বমানের যে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়, সেখানে তফাৎ কোথায়- এটা নিয়ে বার বার আলাপ হয়েছে। সফট স্কিলের জায়গায় আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। আমরা কমিউনিকেট করতে পারছি না। সূক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা, সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের দক্ষতা, কোলাবরেশনের দক্ষতা, দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা— এখন এসব কাজ একেবারে শৈশব-কৈশোর থেকে শিক্ষার্থীরা রপ্ত করবে। তা না করলে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেগুলোকে ক্যাপসুল আকারে গিলিয়ে খাওয়াতে দিলে সম্ভব হয় না। এজন্য নতুন শিক্ষাক্রমে এসব বিষয় শেখানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিম ভাজি-আলু ভর্তার কথা প্রায়শই বলা হচ্ছে, যা একেবারেই অপপ্রচার। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২১টি অধ্যায় আছে। এর মধ্যে জীবন-জীবিকার একটি অধ্যায় হলো রান্না। সেই রান্না কেন? আমাদের শিক্ষার্থী দেখে বাড়িতে মা কিংবা অন্য কোনো একজন রান্না করেন। বিষয়টি জরুরি, সে তা শেখে না। একজন মানুষ যখন রান্না করবে সে রান্নার বিষয়টি চিন্তা করবে। ১২১টি অধ্যায়ের মাত্র একটি এবং সারা বছরে একদিন মাত্র বিদ্যালয়ে পিকনিক করে রান্নাটা দেখবে। এটা বাড়িতে নয়, যেটা বাড়িতে দেওয়া হচ্ছে, সেটা শিক্ষকের না বোঝার ফল। সেজন্য শিক্ষকদের বার বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাক্রম নিয়ে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। যারা কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, কোচিং ব্যবসায়ীরা এটাকে বিকৃত করার জন্য কিছুটা করেছেন। শহরের কিছু বিদ্যালয় এটা করছে। তাদেরকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে পিকনিক করে রান্না শিখবে। রান্না করাটাও একটা আর্ট। এর মধ্যে একটি পরিমিতিবোধ থাকতে হয়। অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, তার সবকিছুই শিক্ষার্থীরা শিখবে। আমরা কি পিকনিক করিনি? কাজেই অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাড়ি থেকে রান্না করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। যারা করছেন, তারা এটা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য করছেন। আর্টপেপার কিনতে হবে, এটাও না বুঝার ফল। মোটেই আর্টপেপার কেনার কথা নয়। বাড়ির পুরনো খবরের কাগজ, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এটাও কিছু শিক্ষকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে করাচ্ছেন। আর মোরগ পালন মোটেই করতে হবে না। এখানেও বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের পেছনে কতিপয় শিক্ষকরা জড়িত। আমরা কয়েক জায়গায় মানববন্ধন দেখেছি, তদন্ত করেছি। সেখানকার স্কুলগুলো জানিয়েছে, এই অভিভাবকেরা তাদের অভিভাবক নন। অনেকে অভিভাবকই নন। তারা হলেন মূলত কোচিং ব্যবসায়ী ও নোট-গাইড ব্যবসায়ী। তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, তাদের ব্যবসা হয়তো উঠে যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ইতোমধ্যে ফল পাওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের যা দরকার, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা সেই দক্ষতা পাচ্ছি। এখন কিছু লিখতে দিলে তারা লিখে দিতে পারে। বলতে দিলে বলতে পারে। বানিয়ে দিতে বললে বানিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
এসকে/আরএইচ