ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মেট্রোরেলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন কাল, অফিসপাড়ায় উচ্ছ্বাস

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৩
মেট্রোরেলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন কাল,  অফিসপাড়ায় উচ্ছ্বাস ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সারাবিশ্বে যানজটের নগরী হিসেবে পরিচিত পাওয়া ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উদ্বোধন করা হয়। সে সময় মেট্রোরেলের প্রথম অংশ উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তার ১০ মাস পরে এসে এবার আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের উদ্বোধন হবে আগামীকাল শনিবার (৪ নভেম্বর)।

আর উদ্বোধনের পরেরদিন (৫ নভেম্বর) থেকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার নতুন এ অংশটি বলে জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক।  

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এ অংশের চালু হতে যাওয়া ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল এ তিনটি স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনগুলো যাত্রীসেবা দেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলছে স্টেশনের ভেতর ও বাইরে পরিচ্ছন্নতা, রঙ করা ও ধোয়ামোছার কাজ চলছে।

এছাড়াও মতিঝিল স্টেশনের ভেতরে উদ্বোধনের প্রস্তুতি কাজ চলছে পুরোদমে।

প্রথমে চালু হবে তিন স্টেশন

এমআরটি লাইন-৬ এর দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে মোট সাতটি। এর মধ্যে প্রথমে চালু হবে তিনটি স্টেশন। স্টেশন তিনটি হচ্ছে- ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন।

এ স্টেশনগুলোর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, এখন কেবল উদ্বোধনের অপেক্ষা।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, প্রাথমিকভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে চালু হতে যাওয়া তিনটি স্টেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে।  এরপর নভেম্বর মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালু হবে বলে জানিয়েছেন এমএএন ছিদ্দিক।

তারপর আগামী দুই মাসের মধ্যেই শাহবাগ, কাওরানবাজার ও বিজয় সরণী স্টেশন চালু হয়ে যাবে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

মতিঝিল, সচিবালয়ে'র অফিসপাড়ায় উচ্ছ্বাস 

মতিঝিল ও গুলিস্তানের সচিবালয় এলাকায় দেশের সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য নানা সংস্থার অফিস।  

কিন্তু এসব এলাকার আবাসিক ভবনে ভাড়া অধিক হওয়ায় স্বল্প ও মধ্য আয়ের চাকরিজীবীদের বড় একটা অংশ থাকেন মিরপুরে। কারণ মিরপুরে তুলনামূলক বাড়িভাড়া কম। ফলে মিরপুর এলাকার বসবাসকারীদের জন্যে মেট্রোরেল বড় সুবিধা বয়ে নিয়ে আসছে।

মতিঝিলের একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন শাহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিরপুর থেকে অফিসে আসতে প্রতিদিন সময় লাগে দেড়ঘণ্টা। কিন্তু রোববার (৫ নভেম্বর) থেকেই মাত্র ১৫ মিনিটে অফিসে আসতে পারবো এটা অনেক আনন্দের।

তবে প্রথম দিকে কেবল সকালে মেট্রো চালু হওয়ায় খানিকটা হতাশার কণ্ঠে তিনি দাবি জানান, দ্রুত বিকেলেও এ অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করা উচিত।  

তবে বিপরীত ঘটনাও রয়েছে। মতিঝিলের পৈতৃক বাসা থেকে মিরপুরের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে অফিস করেন ফজলেহ রাব্বি পিউল।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার অফিস মিরপুর হওয়াতে চাকরির সুবাদে প্রতিদিনই মতিঝিল থেকে মিরপুর যাওয়া লাগছে, যেখানে আমার যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই থেকে তিনঘণ্টা। ইনশাআল্লাহ মেট্রোরেল হওয়াতে এখন হয়তো আধাঘণ্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো।

বিকেলে মেট্রোরেল চলাচল না করায় ক্ষোভে তিনি বলেন, কিন্তু যতদূর জানি মেট্রোরেল প্রথম দিকে শুধুমাত্র সকালের শিফটে চালু হচ্ছে তাই দেখা যাচ্ছে যে ফেরার পথে ওই আগের মতোই ধকল খেয়ে পৌঁছাতে হবে। বলা যায় ব্যাপারটা হয়ে গেছে অনেকটা এমন যে সকালে খাচ্ছি বিরিয়ানি আর রাতে খাচ্ছি ডাল ভাত।  


সকাল-রাতে সময় বাড়ানো হয়েছে

বর্তমান সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল করার কারণে ৮টায় যাদের অফিস তাদের পৌঁছাতে দেরি হয়ে যেতো। যাত্রীদের এ দাবির প্রেক্ষিতে আগামী ৫ নভেম্বর থেকে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে চলাচল শুরু করবে।

এদিকে রাত ৮টার পরে যাদের এমআরটি বা র‌্যাপিড পাস রয়েছে তারা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবেন।  

কিন্তু যেসব যাত্রী স্টেশন থেকে একক টিকিট কাটবেন তারা রাত ৮টা পর্যন্তই সর্বশেষ মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন।

যদিও আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের যাত্রীরা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত  চলাচল করতে পারবেন। ধীরে ধীরে এ অংশেও সময় বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল এমডি।

৩১ মিনিটে মতিঝিল-উত্তরা, মেট্রো ভাড়া ১০০ টাকা 

যেসব যাত্রী উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩১ মিনিট আর ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা। তবে যাদের র‌্যাপিড পাস রয়েছে তারা ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন।

উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। আর আগারগাও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪০ টাকা। মতিঝিল থেকে উত্তরা সেন্ট্রার ও দক্ষিণ ৯০ টাকা, পল্লবী ৮০ টাকা, মিরপুর- ১১, ৭০ টাকা,  মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া ৬০ টাকা, শেওড়াপাড়া ও আগারগাও ৫০ টাকা, বিজয় সরণী ৪০ টাকা, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার ৩০ টাকা, শাহাবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবলায় ২০ টাকা। অন্যদিকে ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের ভাড়া ৩০ টাকা।  

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট ৩০ টাকা ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা। মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা। মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে ৬০ টাকা লাগবে। ফার্মগেট স্টেশন থেকে উঠে কারওয়ান বাজারে নামলেও এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।  

তবে একই ভাড়া দিয়ে যাওয়া যাবে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পর্যন্ত। আর ফার্মগেট থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
এনবি/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।