ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিরল রোগে আক্রান্ত শরীফা খাতুনের বাঁচার আকুতি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
বিরল রোগে আক্রান্ত শরীফা খাতুনের বাঁচার আকুতি!

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় বিরল ‘পেমফিগাস ভালগারিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিনানিপাত করছেন ৪০ বছরের শরিফা খাতুন। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।

 

শরিফা খাতুন সাতক্ষীরা পৌরসভার তালতলা এলাকার ভাজা বিক্রেতা তারিকুল ইসলামের স্ত্রী।

জানা যায়, বিরল ‘পেমফিগাস ভালগারিস’ এটি একটি অতি মারাত্মক চর্মরোগ, যাতে ত্বকে এবং মুখগহ্বর, নাক, খাদ্যনালি, শ্বাসনালি, পায়ুপথ ও প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথাযুক্ত ফোসকা ওঠে। এটি একটি অটো-ইমিউন বুলাস ডিজিজ, যাতে শরীরে বিশেষ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়; যার প্রতিক্রিয়ায় স্বাভাবিক ত্বকের কোষের পারস্পরিক বন্ধন ধ্বংস হয়ে যায়।

সরেজমিনে অসুস্থ শরিফা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা না পাওয়ায় ক্রমশ মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছেন তিনি। তারপরেও দুই চোখে বাঁচার করুন আকুতি তার।

এ ব্যাপারে তারিকুল ইসলামের মেয়ে তানিয়া সুলতানা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, একজন মানুষের শরীরের কোনো অংশে একটু ঘা-পাঁচড়া হলে কেমন হয়? সেখানে আমার মায়ের পুরো শরীরে ঘা-পাঁচড়াসহ পচন ধরেছে। তবুও আমার মাকে বাঁচাতে চাই। দয়া করে তাকে বাঁচাতে সাহায্য করুন।

আক্ষেপ করে তানিয়া সুলতানা আরও বলেন, মাকে সুস্থ করতে নিরলসসেবা শুশ্রূষা করেও এ বছর সাতক্ষীরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়েছি। তবে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না আমাদের। একপর্যায়ে আমার বাবার দোকানের শেষ সম্বল গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করে ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। বর্তমানে আমি অন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে সেখানে যাওয়া হয় না। বই কেনার সামর্থ্যও নেই। বাসায় ঠিক মতো রান্নাবান্নাও হয় না। এখন মায়ের চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের দুই ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ বহন করা অসম্ভব। এজন্য নিজের স্বপ্নকে অধরা রেখে মায়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি।

এসময় মায়ের চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবান মানুষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

শরিফা খাতুনের স্বামী তারিকুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে তার স্ত্রী শরিফা খাতুনের শরীরে এক ধরনের লাল দাগ দেখা যায়। পরে সেখানে ঘা হয়ে পচন ধরে। ভিটে বাড়ি বিক্রি করে সাতক্ষীরা, খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন নামকরা হাসপাতালে শরিফা খাতুনের চিকিৎসা করা হলেও দিনে দিনে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ইতোমধ্যে সারাজীবনের অর্জিত অর্থের পাশাপাশি দুইটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শরিফার চিকিৎসা করেছি। তবে তাকে সুস্থ করতে পারিনি। বরং দিনে দিনে শরীরে পচনের পরিধি বাড়ছে।

আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, হায়াত-মউতের মালিক আল্লাহ্। আমি চাই যে কদিন সে বেঁচে থাকবে, অন্তত উপযুক্ত চিকিৎসাটা যেন তাকে দিতে পারি। আমার সব থাকলেও বর্তমানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ইতোমধ্যে একমাত্র অনার্স পড়ুয়া ছেলের লেখাপড়া অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিরল এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সারাদেশে ১২ থেকে ১৪ জন। উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হলে ৮-১০ লাখ টাকা দরকার। কিন্তু সহায় সম্বলহীন পরিবারের পক্ষে এতো অর্থ জোগাড় করা একেবারেই অসম্ভব।

স্ত্রী শরিফা খাতুনকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন তারিকুল ইসলাম। তার সঙ্গে ০১৭১৯-৫৬৬০৬৯ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।