ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নগরের একাধিক ড্রেন-রাস্তার কাজ বন্ধ, ভোগান্তিতে নগরবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২৩
নগরের একাধিক ড্রেন-রাস্তার কাজ বন্ধ, ভোগান্তিতে নগরবাসী

বরিশাল: দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় বরিশালের বেশ কিছু সড়ক ও ড্রেন নিয়ে বিপাকে পড়েছে নগরবাসী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিল না পাওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন মেয়র দায়িত্ব নিলে কাজ শুরু হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের রাস্তা ও ড্রেনের নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ শুরু হয় সিটি নির্বাচনের আগ মুহূর্তে। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এসব কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি বিদায়ী পরিষদের শীর্ষ ব্যক্তির হস্তক্ষেপে পড়ে থাকা কাজের বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, কাজ শেষ না করে বিল তুলে নেওয়ার নজির এর আগে ছিল না।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেসব কথা জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তা শুনতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা চাচ্ছেন, যেন দ্রুত রাস্তা ও ড্রেনের নির্মাণ এবং সংস্কার শেষ হয়।

কিন্তু বরিশাল সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এখনও দায়িত্ব না নেওয়ায় এ কাজ কবে আবার শুরু হবে, সে ব্যাপারে কেউ কিছু জানাতে পারছে না।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় সড়ক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোড, বৈদ্যপাড়া রোড, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গোরস্থান রোড, ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া সড়ক (অধ্যক্ষ ইউনুস খান সড়ক), ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষিরোদ মুখার্জী লেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজালাল সড়কসহ (লুৎফর রহমান সড়ক) পলাশপুরের দলিল উদ্দিন স্কুল সংলগ্ন সড়কসহ বেশকিছু সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তালভিটা প্রথম গলি, বৈদ্যপাড়া এলাকা, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া এলাকার ড্রেনের নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়া সড়ক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের শেরে বাংলা সড়কসহ নগরের অনেক সড়কের কোনো সংস্কার কাজই হয়নি গত কয়েক বছরে।

নগরের শাহজালাল সড়ক এলাকার বাসিন্দা তমাল জানান, মেয়র কামালের সময় একবার সড়কে খোয়া ফেলা হয়েছিল। কিন্তু কার্পেটিং হয়নি। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এসেও খোয়া ফেলেছেন। কিন্তু কার্পেটিং হওয়ার আগেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

বৈদ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা কামাল বলেন, সিটি নির্বাচনের আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। কিন্তু ভোটের পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। খোঁড়াখুঁড়ির আগে রাস্তা দিয়ে রিকশা চলাচল করতো। এখন হাঁটাচলাই দায় হয়ে পড়েছে। আবার সিঅ্যান্ডবি রোডের অগ্রভাগের রাস্তায় ড্রেনের কাজ চলছিল, সেটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্ল্যাব ছাড়া ড্রেন নিয়ে এলাকার সবাই আতঙ্কে আছে।

একই অবস্থা তালভিটা রোডেরও। বিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা রাস্তার কাজ শুরু করেছিল, এখন বন্ধ করে রেখেছে। রাস্তা কেটে কোনোরকম একটি ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। অনেক জায়গায় নালা কেটে রড দিয়ে রাখলেও ঢালাই করা হয়নি। ড্রেনগুলোও খোলা অবস্থায় থাকে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা কাউন্সিলরদের সঙ্গে স্থানীয়রা খোলামেলা কথাও বলেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি করছেন তারা। এ ব্যাপারে কথা হলে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, সিটি নির্বাচনের আগে চলাচলের উপযোগী রাস্তাগুলো কেটে ড্রেন ও সংস্কারের কাজ হাতে নিয়ে এখন তা বন্ধ থাকায় প্রায়ই বাসিন্দারা অভিযোগ নিয়ে আসছেন। শুনেছি যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে, সেই পর্যন্ত নাকি বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদার। কিন্তু সেখানেও নাকি সমস্যা রয়েছে। যে কাজ বাস্তবে হয়েছে তার থেকে বেশি বিল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার ড্রেনগুলো যে মানের হওয়ার কথা ছিল তাও হয়নি। এখন নতুন মেয়র চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এগুলোর কাজ শেষ করা আর সম্ভব নয়। ভোগান্তি নিরসনে তাই আরও কিছুটা সময় লাগবে।

বিপ্লবের দাবি, বিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের আগে নিজের অনুসারীদের বিজয়ী করতে আকস্মিক এসব কাজ হাতে নেন। কিন্তু নির্বাচনে তার অনুসারীরা পরাজিত হওয়ায় কাজগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা নিয়মে নেই। একজন ঠিকাদার কোনো কাজ নিলে তা শেষ করে বিল তুলতে হয়। কাজের মান খারাপ বা শেষ করতে বিলম্ব করলে কর্তৃপক্ষ নিয়মানুযায়ী যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে।

অন্য জনপ্রতিনিধিরা আবার বলছেন, যেসব সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ নির্বাচনের পর আকস্মিক বন্ধ হয়ে গেছে, বেশিরভাগই নিয়ম না মেনে বিদায়ী মেয়রের অনুসারীদের করতে দেওয়া হয়েছিল। এবারের সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া ও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিদায়ে নানা শঙ্কায় কাজগুলো বন্ধ রাখা হয়। সেইসাথে ঠিকাদারদের যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে তার ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র সাদিকের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার বলেন, নির্মাণাধীন সড়ক ও ড্রেনগুলোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে ঠিকাদাররা তার বেশি বিল উত্তোলন করতে পারেনি। নতুন মেয়র বসার পরে সড়কগুলোর কাজ যথাযথ নিয়ম মেনে শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২৩
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।