ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শনিবার রেললাইন ছাড়াও কক্সবাজারে ৫৩ হাজার কোটির ১৬ প্রকল্প উদ্বোধন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
শনিবার রেললাইন ছাড়াও কক্সবাজারে ৫৩ হাজার কোটির ১৬ প্রকল্প উদ্বোধন কুতুবদিয়া, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ১৮ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প ছাড়াও ৫৩ হাজার কোটি টাকার আরও ১৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজার থেকে এসব উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করবেন তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন জানায়, রেললাইন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যে ১৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তাতে রয়েছে- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত মাতারবাড়ী ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্তি প্রকল্প।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার সদরে খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১ প্রকল্প।

এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন ৩ প্রকল্প।

মাতারবাড়ী ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র
সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তায় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় গত ২৯ জুলাই দুপুরে। ৬শ’ মেগা ওয়াটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ১২শ’ মেগাওয়াটে উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরের শুরুতে। উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থানে ১ হাজার ৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি ইউনিটে বিভক্ত। ১২শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) বাস্তবায়ন করছে।

২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ী আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোলপাওয়ার প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা।

জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) এ প্রকল্পের জন্য ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ অর্থ বাড়িয়ে জাইকা মোট ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা দিয়েছে। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অবশিষ্ট অর্থ ব্যয় করেছে।

সাবমেরিন ক্যাবলে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত প্রকল্প
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত হয়েছে। সমুদ্রের নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় গত ১৩ এপ্রিল। ওইদিন থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার গ্রাহক পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পেতে শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৯৮০ সাল থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ওই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে।  

তিনি জানান, দ্বীপের ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।

দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ২০২০ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ৪০০ কোটি টাকায় ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই কুতুবদিয়ায় পৌঁছে গেল জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া। সাগরতলে দুই লেনে গেছে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার ক্যাবল। সেখানে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র, ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ ছাড়া উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরে খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প। যেখানে রয়েছে ৪ কোটি টাকায় নির্মিত কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল ঠাণ্ডা চৌকিদার পাড়ার ৬০ মিটার সিসি গার্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প এবং ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীতে গোরকঘাটা-জনতা বাজার সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প- ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরের জাহারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর ইউনুসখালি নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ার রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মারিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৫ কোটি টাকায় বাস্তবায়নকৃত রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর নন্দাখালীতে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এমইউএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।