কক্সবাজার: দৃষ্টিনন্দন এ রেল স্টেশনটি দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। বিশালাকার এ স্টেশনের ঠিক মাঝখানে বসানো হয়েছে ঝিনুক আর সেই ঝিনুকের পেটে মুক্তা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের।
শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্টেশন প্রাঙ্গণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজার শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়ায় ঝিনুক স্টেশন। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে সকালে ট্রেনে উঠে দুপুরে কক্সবাজারে নেমে সমুদ্রসৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে যে কেউ রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন। এ জন্য মূল্যবান জিনিসপত্র স্টেশনের লকারে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ থাকতে চাইলে থাকার ব্যবস্থাও আছে। গত ২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে প্রথম ট্রেন পরিদর্শন ট্রেন আইকনিক রেল স্টেশনে এসেছে। ওইদিন সন্ধ্যায় হুইসেল বাজিয়ে আটটি বগি নিয়ে প্রথম ট্রেনটি যখন ঢুকে তখন মানুষের আনন্দের শেষ নেই।
কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ কক্সবাজার আসে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য দেখতে। তার সঙ্গে যদি ঝিনুকের আদরে নান্দনিক রেল স্টেশন দেখে স্বাভাবিকভাবে মুগ্ধ হবে আগামীর নতুন প্রজন্ম। কক্সবাজার যে আগামী ১০০ বছরের জন্য তৈরি হচ্ছে এই ঝিনুকটাই কিন্তু তা জানান দিচ্ছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত পছন্দকে অভিনন্দন জানাই।
সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ২৯ একর জমির ওপর সামুদ্রিক ঝিনুকের আদলে নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। রেলস্টেশন ভবনটি এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোর পাশাপাশি একজন পর্যটককে যেন ভ্রমণ-সংক্রান্ত কোনো জটিলতায় পড়তে না হয়, বেড়াতে এসে বাড়তি খরচ না করতে হয়, সেসব দিকে লক্ষ রেখেই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে। রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণের পর পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ৪৬ হাজার যাত্রী কক্সবাজারে যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, ছয়তলা বিশিষ্ট স্টেশনটি নির্মাণে চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং ছয় শতাধিক লোক কাজ করছে। চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি দৃশ্যমান হয়েছে। মূল ভবনের সামনে তৈরি করা হয়েছে ঝিনুকাকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। ঝিনুকের ভেতরে মুক্তা। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। তারপর চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে পদচারী–সেতু হয়ে উঠবেন ট্রেনে। আবার ট্রেন থেকে নেমে ভিন্ন পথে বেরিয়ে যাত্রীরা ছুটবেন পর্যটন শহরে। ভবনের পূর্ব পাশে ৮০ ফুট লম্বা পদচারী সেতু। এর সঙ্গে পৃথক তিনটি চলন্ত সিঁড়ি। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ভবনের উত্তরে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অপেক্ষামান যাত্রীদের জন্য বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, মূল ভবনের নিচতলায় থাকবে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনাকক্ষ, লকার, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী–সেতুতে যাতায়াতের পথ। দ্বিতীয় তলায় থাকবে শপিং মল, শিশু যত্নকেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশু যত্নকেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ঝিনুক স্টেশন আমাদের জন্য গর্বের। এই স্টেশন পর্যটন শহরের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ বাড়িয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনে নেমেই বিমোহিত হবেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, এটি নিঃসন্দেহে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। একজন পর্যটক রেল স্টেশনে নেমে প্রথমেই এটি দেখে মুগ্ধ হবেন।
ইতোমধ্যে স্টেশনটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রেলপথের স্বপ্ন পূরণের মধ্যে ঝিনুক স্টেশনের মতো একটি আধুনিক স্টেশন কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এসবি/এসআইএ