বরিশাল: দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাব থাকায় বরিশাল অনেক পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)।
রোববার (১২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের কালুশাহ সড়কস্থ তার বাসভবনে আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র খোকন বলেন, আমি চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, সেখানকার মানুষের কার্যক্রম নিজে দেখেছি। চট্টগ্রামে আমাদের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর রয়েছে। সেখানে বন্দরকেন্দ্রীক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ এখন তিনটি বন্দর তৈরি হয়েছে ওখানে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মানুষের জন্যই এগুলো করেছেন, যাতে জনগণ আত্মনির্ভরশীল হয়। কক্সবাজারের পর্যটনকে উন্নত করার জন্য সেখানে রেললাইন হয়েছে, নান্দনিক রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আজ মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে ঢাকায় মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়েছে। এককথায় সময় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি বরিশালবাসীও এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিগত দিনে কেউ কোনো একটি প্রজেক্ট দীর্ঘদিন করতে পারেনি, সুতরাং আপনারা সবাই আমার আন্তরিক ভালোবাসা গ্রহণ করবেন এবং এই বরিশালকে একটা নতুন নগরী করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
শেখ হাসিনার চিন্তা-চেতনায় বরিশালের বিষয়টি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি সেই সুযোগ গ্রহণ করতে না পারি সেই ব্যর্থতা আমাদের। আমাদের যে সমস্যা, তার যে সমাধান তা কেউ করবে না। এখানে এনজিওদের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ ছিল, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। অনেক অভিযোগ আমি শুনতে পাই যা আমাকে মর্মাহত করে।
মেয়র খোকন আরও বলেন, সরকারের শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনা যে টাকা আমাদের দিয়েছেন, তার এ আন্তরিকতার জন্য বরিশালবাসী কৃতজ্ঞ। মন্ত্রণালয়ে যখন গিয়েছি তখন মন্ত্রী থেকে সচিবসহ সবাই আমাকে স্বাদরে গ্রহণ করেছেন। তখন বিভিন্ন কথায় আমার নিজের কাছেও খারাপ লেগেছে এবং লজ্জিত মনে হয়েছে, যে বরিশালে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড কিছুতেই মানা যায় না।
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে গিয়ে অব্যবস্থাপনা দেখে হতাশ হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশালে অনেক সমস্যা, মেডিকেল কলেজের অবস্থা খুবই ভয়ানক। মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতাল থেকে মানুষ সেবা পাবে, তাই এখানে কিছু একটা সুন্দরভাবে করার চিন্তা আমার রয়েছে। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল লোকদের সাথে অবশ্যই আলোচনা করবো। সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও তেমনি আছে, যা সবাইকে মিলেই করতে হবে। আমার কোথাও ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই, আমার স্বার্থ হলো বরিশালের মানুষকে সেবা দান করা, সেবার নিশ্চয়তা দান করা এবং সর্বোপরি উন্নয়নের অবকাঠামো তৈরি করা।
বরিশাল নগরের দুটি বাস টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এখানকার অব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবা যায় না। স্যানিটেশন, পার্কিং ব্যবস্থা নেই। বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। এখানকার উন্নতি দ্রুততার সাথে করতে চাই। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচনের কারণে কিছু সময়ের জন্য সমস্যা হতে পারে।
আমি কারও প্রতি অন্যায় অবিচার করবো না, কিন্তু কেউ যদি অন্যায়-অনিয়ম করে থাকে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশালে কোনো অফিসার আসতে চায় না, এখানে কর্মকর্তাদের মান-সম্মান থাকে না। আমাদের প্রতি তাদের এই দৃষ্টিকোণ খুবই খারাপ বিষয়। আমাদের এখানে আঞ্চলিক কোনো কর্মকর্তা নেই, সিও নেই, ম্যাজিস্ট্রেট নেই। সচিব আসার পরে ভয়-ভীতির কারণে চলে যেতে চেয়েছেন, আমি তাকে কোনোভাবে রিকোয়েস্ট করে রাখার ব্যবস্থা করেছি। যাই হোক আমি আপনাদের কাছে অভিযোগ করতে চাই না। আমি চাই পেছনের দিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
আগামী ১৪ নভেম্বর দায়িত্ব নেবেন মেয়র খোকন। তার অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ১২ নভেম্বর, ২০২৩
এমএস/এমজে