ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন আইন: কুরিয়ারে নগদ অর্থ পরিবহনে জেল-জরিমানা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
নতুন আইন: কুরিয়ারে নগদ অর্থ পরিবহনে জেল-জরিমানা

ঢাকা: সেবার মূল্য তালিকা মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা কার্যালয়ে সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে প্রদর্শন না করলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে কুরিয়ার সার্ভিস আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

এসব অপরাধে তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড রাখা ছাড়াও মেইল ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো পার্সেল বা প্যাকেটের ভেতরে কোনো নগদ অথবা বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহনে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

‘বাংলাদেশে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস উন্নয়ন ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৩’ নামে আইনটি রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিলটি নিয়ে আলোচনা ও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সই চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ দ্রব্য, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি গ্রহণ, বাছাই, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিলি করতে পারবে না। আইন অমান্য করলে জেলা-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে তা একটি অপরাধ হবে এবং এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব ছয় মাস কারাদণ্ড বা ন্যূনতম এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সেবার মূল্য তালিকা মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা কার্যালয়ে সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে প্রদর্শন না করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।  

কোনো ব্যক্তি এই আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্য রাখলে বা রাখার প্রস্তাব করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব ২ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ আইনের অধীন লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো পার্সেল বা প্যাকেটের ভেতরে কোনো ধরনের নগদ অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহন করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে সরকারের অনুকূলে সরকারের প্রাপ্য সার্ভিস চার্জ জমা না করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব ১ মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা বা সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।  

কোনো ব্যক্তি কারচুপির আশ্রয় নিয়ে সার্ভিস চার্জ কম দেখানো বা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি যদি বুকিংকালে বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল নেন, তবে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব দুই মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র নেওয়া ও নবায়ন ছাড়া এজেন্সির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ৭৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি এজেন্ট নিয়োগের অনুমতিবিহীন কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসাবে ব্যবসায় পরিচালনা করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনূর্ধ্ব দুই মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি যে শ্রেণির লাইসেন্স নিয়েছেন সেই শ্রেণির ব্যবসার পাশাপাশি অন্য শ্রেণির ব্যবসা পরিচালনা করেন বা শ্রেণি পরিবর্তন করে অন্য শ্রেণির ব্যবসা পরিচালনা করেন, তবে তা হবে একটি অপরাধ এবং এর জন্য তিনি অনূর্ধ্ব দুই মাসের কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন, তবে উক্ত অপরাধের জন্য তিনি নির্ধারিত সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

খসড়ায় বলা হয়েছে, আইনের মাধ্যমে ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং আইনের বিধান সাপেক্ষে স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করার, অধিকারে রাখার ও হস্তান্তর করার, চুক্তি সম্পাদন ও অন্যান্য কার্য সম্পাদন করার ক্ষমতা ও উদ্যোগ নেওয়ার অধিকার এ কর্তৃপক্ষের থাকবে। কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকবে। তবে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো স্থানে আঞ্চলিক বা শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে।

কর্তৃপক্ষের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন, যিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অন্যূন সরকারের যুগ্মসচিব এবং তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী হবেন। কর্তৃপক্ষের তিনজন সদস্য থাকবেন, যারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অন্যূন সরকারের উপ-সচিব পদমর্যাদাসম্পন্ন হবেন। সদস্যদের মধ্যে একজন ডাক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হবেন, তবে ডাক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে তার স্থানে সরকার প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগ বা পদায়ন করতে পারবে।

কর্তৃপক্ষ এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মেইলিং ও কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ইস্যু, লাইসেন্সের শ্রেণিবিন্যাস, ইস্যুকরণ পদ্ধতি, লাইসেন্সের শর্ত নির্ধারণ, বাতিল ও বাতিলের শর্ত নির্ধারণ করতে পারবে। কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পরিচালনা করতে পারবে না।

লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে এজেন্সি অনুমতিপত্র প্রাপ্তির পর এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে মেইলিং ও কুরিয়ার ব্যবসা পরিচালনা করিতে পারবে। তবে কোনো এজেন্ট সাব-এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবে না।

অপরাধ বিচারার্থে নেওয়া ও বিচার কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এ আইনের অধীন কোনো মামলা বিচারার্থে নেবে না। এ আইনের অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষেত্রমতো, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এমআইএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।