ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকাসহ ১২ দাবি ট্যানারি শ্রমিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকাসহ ১২ দাবি ট্যানারি শ্রমিকদের

ঢাকা: ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানান ইউনিয়নের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সরকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। তখন সর্বনিম্ন ৫ নম্বর গ্রেডে মূল মজুরি ও ভাতাদিসহ মোট মজুরি নির্ধারণ করা হয় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা।  

তিনি বলেন, গেজেটের শর্ত অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের তারিখ থেকে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ট্যানারি শিল্পের মালিকরা সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেননি। এদিকে রেকর্ড ভাঙা দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিকদের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠায় স্বল্প বেতনভোগী শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনধারণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নতুন ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করে গত ৭ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর পত্র পাঠাই। পরে প্রায় তিন মাস পর আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি যে, ট্যানারি শিল্প সেক্টরের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং ট্যানারি শিল্পে নিযুক্ত সব শ্রেণীর শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি হারের সুপারিশ করার জন্য গত ১৭ আগস্ট মজুরি বোর্ডের প্রথম সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে আরও জানতে পারলাম যে, সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে যে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট শিল্প সেক্টরের অর্থাৎ ট্যানারি শ্রমিকদের কোনো প্রতিনিধি (সদস্য) রাখা হয়নি, যা শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গঠিত মজুরি বোর্ডে ট্যানারি শিল্প সেক্টরের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে যাকে রাখা হয়েছে, তিনি অন্য সেক্টরের এবং একটি জাতীয় ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা। ট্যানারি শিল্প সেক্টর সম্পর্কে তার ন্যূনতম কোনো ধারণা নেই এবং ট্যানারি শিল্প ও শ্রমিকদের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এ ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখবেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন ট্যানারি শিল্পে বেশ কিছু সমস্যা বিরাজমান। তাই আমরা ট্যানারি শিল্প শ্রমিকদের জন্য গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ডে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পুনঃগঠন ও ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১২ দফা দাবি জানাচ্ছি।

১২ দফা দাবি

১. ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করা।

২. বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে ট্যানারি শিল্প সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ ও ঘোষণা করা।

৩. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র দেওয়াসহ ট্যানারি কারখানাগুলোতে শ্রম আইনের সব ধারা বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।

৪. শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াসহ ডিআইএফইয়ের কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা।

৫. বর্তমান চামড়া শিল্প নগরীতে যে জায়গা খালি আছে, সেখানে অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন করা এবং বড় ও মাঝারি সব ট্যানারি কারখানায় কমানো মূল্যে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া হেমায়েতপুরে নতুন করে যে জমি অধিগ্রহণ করা হবে, সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা।

৬. প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ শ্রম আইন অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

৭. মধ্যস্বত্বভোগী বেআইনি কনট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজ করা অবিলম্বে বন্ধ করে সরাসরি কারখানার মালিকের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করা।

৮. শ্রমিক ছাঁটাই ও হয়রানি বন্ধ করে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা এবং আইনে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চায় প্রশাসনিক এখতিয়ার বহির্ভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।

৯. সরকারের নেওয়া এবং অনুমোদিত ট্যানারি শিল্পের জন্য ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন (জাতীয় কর্মপরিকল্পনা) দ্রুত বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।

১০. সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা এবং তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জনের পথ সুগম করা।

১১. ট্যানারি শিল্পে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিককে কমানো মূল্যে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।

১২. সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আলাদাভাবে চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে এ শিল্পের একটি বড় স্টেকহোল্ডার শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা।

এ সময় ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখাসহ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩ 
এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।