ঢাকা: সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে গত ১৭ দিন ধরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দল গুলো। মাঝেমধ্যে দুয়েকদিন দিন বিরতি দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে চলছে এ আন্দোলন।
আন্দোলনকারী দলের কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের গূরুত্বপূর্ণ নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর কারাগারের বাইরে যারা আছেন তারাও রয়েছেন সর্তক অবস্থানে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীর আন্দোলন কোন পথে এগিয়ে নেবে বিএনপি? এমন আলোচনা যখন সর্বত্র; তখন কি দলটির হাইকমান্ড ‘অন্তিম মূহর্তেও’ ভোটে না গিয়ে আরো জোরালো আন্দোলন নিয়ে রাজপথে অটল থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে দাবি আদায়ে দেশ অচল করে দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
‘একদফা দাবি’ আদায়ে আজ সোমবার চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী ফের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।
আন্দোলন কমর্সসূচি নিয়ে কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশের নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে এখন ‘গ্রেফতার ঝড়’ চলছে। তবে গ্রেফতার, মামলা হামলা যতই চলুক লক্ষ্য পূরণের আন্দোলন থেকে তাদের হটানো যাবে না। তাদের বক্তব্য দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাঁধাগ্রস্ত করতে সরকার যতোই হার্ডলাইনে যাবে; বিএনপি ততই কৌশলী ও আত্মবিশ্বাসী হবে। আগামী দিনের কর্মসূচিতে আনা হবে ভিন্নতা, একই সঙ্গে জোর চেষ্টা থাকবে সমমনা দলের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার।
রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তফসিল ঘোষণা করা হলে কী করবে বিএনপি? এমন প্রশ্নের উত্তরে দলটির নেতারা বলছেন, তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে দাবি আদায়ে দেশ অচল করে দেয়া হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে ‘অলআউট’ আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্দোলনের নানা বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছেন বিএনপি নেতারা। এ ক্ষেত্রে অবরোধের সঙ্গে হরতাল, ঢাকা অবরোধ বা ১শ পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল এবং ক্ষমতাসীনদের আচরণের ওপর নির্ভর করে অসহযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, বিএনপির কয়েকজন জেলা পর্যায়ের নেতা ও সাংগঠনিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আন্দোলনের মাঠে হামলা মামলার শিকার হয়ে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই এই মুহূর্তে রাজপথই তাদের ঠিকানা।
নেতারা জানান, আন্দোলনের দিক নির্দেশনা নিয়ে সেগুলো তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে প্রতি মুহূর্তে সাংগঠনিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক তারা মাঠে নেমে পড়ছেন। আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাংলা নিউজকে বলেন, এখন থেকে সারাদেশের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে আরো সক্রিয় ভাবে রাজপথে থাকবে। জেলা ও থানার নেতারা সমন্বয় করে আগামীর কর্মসূচি পালন করবেন।
সূত্র জানায়, দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের পাশে থেকে আন্দোলন জোরদার করার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ও ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে নেতারা নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থেকে নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। দলীয় হাইকমান্ড সবাইকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলনে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে যেসব জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন স্তরের কমিটির শীর্ষ নেতারা আটক হচ্ছেন, সেখানে পরবর্তী পদের নেতাকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলা নিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণা হলে সরকার বিরোধী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়বে সরকারের এমন চিন্তা একেবারেই বোকামি। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের তফসিল ঘোষণার উদাহরণ অনেক দেখেছি। তফসিল ঘোষণার পরে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, সেই উদাহরণও অনেক দেখেছি। শুধু তাই নয়, তফসিল ঘোষণার পরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা, তা বাতিল হওয়ার উদাহরণও আছে। তাছাড়া তপসিল ঘোষণা হলেই যে নির্বাচন হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, বিএনপির দাবি আদায়ের আন্দোলন এবার ব্যর্থ হবেনা। তফসিল ঘোষণা করা হলে আমাদের আরো কিছুদিন ত্যাগ স্বীকার করে আন্দোলন করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। কঠোর গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
টিএ/এমএম