ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শনিবার শুরু হচ্ছে দুবলার চরের রাস উৎসব 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
শনিবার শুরু হচ্ছে দুবলার চরের রাস উৎসব 

খুলনা: সুন্দরবনের দুবলার চরে তিনদিন ব্যাপী রাস উৎসব শনিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে। রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের দুবলারচরে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমায় পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে।

ইতোমধ্যে নির্বিঘ্নে উৎসব পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পূজা অর্চনার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী মন্দির।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার থেকে ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পূজা’ অনুষ্ঠিত হবে। পুণ্যার্থী ছাড়া অন্যরা এ সময় সুন্দরবনে  যেতে পারবেন না। পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে।

পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে নদীপথে নিরাপদ যাতায়াতে ও হরিণ শিকার বন্ধে বনরক্ষীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

রাস উৎসবের ইতিহাস

দুবলার চরের রাস উৎসব প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। জানা গেছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন।

আবার কারো কারো মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাস নৃত্যে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় আয়োজিত হয়ে আসছে রাস উৎসব। অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপ মোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে বসে রাসমেলা।

কী হয় রাস উৎসবে

আগে দুবলার রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশ থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী ও পর্যটকের সমাগম ঘটতো। প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ প্রতি বছর এ উৎসবে যোগ দিতেন।  

রাস উৎসবে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন পুণ্যার্থীরা। তারা সাগরকে সামনে নিয়ে নির্জনে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতা নীলকমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় মগ্ন হন। পাপমোচন করেন সমুদ্রস্নানে। সূর্যোদয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেন ফল-ফুল। এরপর ঢাক-ঢোলক-কাসা-মন্দিরা বাজিয়ে ভজন-কীর্তন নিনাদিত করেন চারপাশ। পূজা-অর্চনার ফাঁকে সূর্যাস্তের পর সাগরকে সাক্ষী রেখে আকাশের বুকে উড়িয়ে দেওয়া হয় ফানুস।

সন্তানহীন ধর্মনুরাগী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলার রাস উৎসবের সময়ে মানত করেন এবং মেলায় এসে মানতকারীরা আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করে থাকেন। মেলায় বাদ্য, নৃত্য, গীত ও বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কুটির শিল্পের দোকান ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ফলসহ মনোহারী সামগ্রীর দোকান বসে এখানে।

যেভাবে যাবেন রাসমেলায়

প্রতি বছরের মতো এবারও রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে সুন্দরবনের দুবলার চরে আগামী ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনের ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে। পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

অনুমোদিত পাঁচটি পথ হলো- ১. বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর ২. কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে শিবসা, অতঃপর শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর ৩. নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর ৪. ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর ৫. বগী-বলেশ্বর-সুপতি-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।  

রাস মেলায় প্রবেশের সময় প্রতিটি এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি, লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায় পূর্বক পাশ প্রদান করা হবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে।

প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে পথ/রুট উল্লেখ করা হবে ও যাত্রীরা নির্ধারিত রুটগুলোর মধ্যে পছন্দমতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন, ২৫ নভেম্বর তারিখ দিনের ভাটায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং নৌযানগুলো কেবল দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে অথবা স্টিকার দিয়ে বিএলসি/ সিরিয়াল নম্বর, তীর্থযাত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। সুন্দরবনে প্রবেশকালে তীর্থযাত্রী/পুণ্যার্থীকে একটি করে টিকেট/টোকেন প্রদান করা হবে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন টোকেন ও টিকেট নিজের সঙ্গে রাখতে হবে। প্রতিটি লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারকে আলোরকোলে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে রিপোর্ট করতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের সময় কোনো বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ 

লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যস্নান স্থলে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ফোটানোসহ কোন প্রকার শব্দ দূষণ করা যাবে না। রাস পূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
এমআরএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।