চাঁদপুর: ঘূর্ণিঝড় মিধিলির পরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ৪০ হেক্টর জমির রবি মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যে সব কৃষক ঋণ করে আবাদ করেছিলেন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো আগামী বোরো মৌসুমের আগ পর্যন্ত পতিত পড়ে থাকবে। কৃষি বিভাগ বলছে-জলাবদ্ধতার কারণ নির্ধারণ করে ওইসব এলাকায় গণসচেতনতা তৈরি করা হবে।
গত কয়েকদিন উপজেলার কালচো উত্তর ইউনিয়নের মাড়কি উত্তরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, পৌর এলাকার বলাখাল গ্রাম ও সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে শীতকালীন আগাম সবজি, আলু ও অন্যান্য ফসল জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। অনেক কৃষক তাদের সর্বশেষ ফসল রক্ষায় জমি থেকে সেচের মাধ্যমে পানি অপসারণ করছেন। বাকি আবাদি জমিগুলোর গাছ ধীরে ধীরে মরে নুয়ে পড়ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৫ হেক্টর জমি। এছাড়াও ১৫ হেক্টর জমির সরিষা, আলু, মরচি, খিরা, শসা, টমেটো, ফুলকপি, রসুন ও পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপজেলা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা।
মাড়কী উত্তরপাড়ার কৃষক আবুল বাশার জানান, তিনি এ বছর তিন একর জমিতে আগাম শীতকালীন শাক সব্জির আবাদ করেছেন। জলাবদ্ধতায় তার পুরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে তার এখন পথে বসার অবস্থা। এই কৃষক বিভিন্ন সমিতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ করেছেন। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে তার বাবা আব্দুল হালিম মারা গেছেন।
ওই এলাকার কৃষক মোস্তফা, কবির মিয়াজী, মো. জসিম গাজী ও রফিক দত্ত জানান, তাদের নিজেদের জমির ফসল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেমনি মাড়কী উত্তর ও পশ্চিম পাড়ার প্রায় দুই শতাধিক কৃষকের রবি মৌসুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মাড়কী পশ্চিম পাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ মিয়াজী জানান, তাদের এলাকার কৃষক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে রেখেছে তাদের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সরেজমিন এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এলাকার তিন ফসলি জমিগুলো আর আবাদ হবে না। পতিত পড়ে থাকবে বছরের অধিকাংশ সময়।
বলাখলাল গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, ৫ একর জমিতে লাউ, চালকুমড়া, মিস্টি কুমড়া, খিরা ও শসা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার আর কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, সরকারি খাল ভরাট বা মাছ চাষ করে জলাবদ্ধতা তৈরি করে বাড়িঘর নির্মাণ করার কোনো বিধান নাই। ইতোমধ্যে কিছু বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ এলে কৃষি বিভাগ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যবস্থা নেবে। তবে এক্ষেত্রে জন সচেতনতা তৈরি করা সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে আমি মনে করি। আর বাধঁ দেওয়া বা বাড়ি তৈরি করার আগে অভিযোগ দিতে হবে। বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে অভিযোগ দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা প্রনোদণার আওতায় আনব।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
আরএ