নরসিংদী: আজ ১২ ডিসেম্বর, নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ নয় মাস নরসিংদীর জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ডযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হন ১১৬ জন বীর সন্তান।
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর নরসিংদীতে সমাপ্তি ঘটে নয় মাসের শ্বাসরুদ্ধকর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিবাহিনীর হাতে পরাজয় বরণ করে পাক হানাদাররা। কিন্তু যারা দেশের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল, স্বাধীনতার ৫১ বছর পর গণকবরগুলো রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও দৃশ্যমান কেবল দু-একটি বধ্যভূমি ছাড়া বাকি সব রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের।
মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলা ছিল ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে, সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর শফিউল্লাহ (পরে মেজর জেনারেল ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান)। পরে নরসিংদীকে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে নেওয়া হলে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. নূরুজ্জামান।
মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদীতে যাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে তাদের মধ্যে- সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূইয়া, আব্দুর রব খান, ফটিক মাস্টার, নেভাল সিরাজ, মজনু মৃধা, মেজর শামসুল হুদা বাচ্চু, গয়েছ আলী মাস্টার, শহীদ সাত্তার, কিরণ খান, আফতাব উদ্দিন ভুঞা, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এমপি, আব্দুল আলী মৃধা, আব্দুল আজীজ খান, নুরুল ইসলাম গেন্দু, মো. আলী আকবর, কমান্ডার জসিম উদ্দিন, প্রফেসর সাহাবুদ্দিন, সাংবাদিক হাবিবুল্লা বাহার, ফজলুল হক খন্দকার. বজলুর রহমান, সায়েদুর রহমান সরকার ছন্দু মিয়া, নুরুল ইসলাম কাঞ্চনের নাম উল্লেখযোগ্য।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেহ রিকাবদার বলেন, জেলার এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে পাক বাহিনীর নিষ্ঠুর ছোবল পড়েনি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা ব্রিজ, শিলমান্দী মাছিমপুর বিল, খাটেহারা ব্রিজ, মনোহরদীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীর, শিবপুরে ঘাসিরদিয়া, পুটিয়া, বেলাব আড়িয়াল খাঁ নদীর পাশে, রায়পুরা মেথিকান্দা রেল স্টেশনের গণকবর রয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস অম্লান রাখতে গণকবরগুলো রক্ষার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নূর আলম বলেন, ১২ ডিসেম্বর সকালে জিনারদীতে পাকিস্তানি সৈন্যরা রেললাইন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলেও আমাদের প্রবল আক্রমণের কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আমরা নরসিংদীকে শত্রু মুক্ত করি।
সেক্টর কমান্ডার নরসিংদী ৭১’ এর সভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোতালেব পাঠান বলেন, ২১ জন পাক হানাদারকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আমরা নরসিংদী হানাদার মুক্ত করি। এই যুদ্ধে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। জেলার বধ্যভূমি গুলো অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে বধ্যভূমি গুলো সংস্কার করে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তোলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে তারা বাংলার মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গুলো স্বচক্ষে দেখতে পারে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত সম্মানী ভাতায় চিকিৎসা চালিয়ে সংসার চালানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই ভাতা বৃদ্ধি করে মুক্তিযোদ্ধাদের রেশনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নরসিংদীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। নরসিংদীর নতুন প্রজন্মের কাছে দিনটির ইতিহাস তোলে ধরার জন্য বিজয় কনসার্টের এ আয়োজন। এখানে নরসিংদীর মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব তোলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর সকালে নরসিংদী মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে এক বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি, আলোচনা সভা এবং দুপুর ২টায় নরসিংদী মুসলেহ উদ্দীন ভূইয়া স্টেডিয়ামে বিজয় কনসার্টটি শুরু হয়। দেশসেরা কয়েকটি ব্যান্ড ও একক সঙ্গীতশিল্পী ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলো এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করবে। অনুষ্ঠানটির নিরাপত্তার ব্যবস্থায় নিয়োজিত থাকবে জেলা পুলিশ, র্যাব, আনসার ব্যাটালিয়ন, ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
এসএম