ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত চেয়ারম্যান-চিকিৎসক, গ্রেপ্তার ৯

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত চেয়ারম্যান-চিকিৎসক, গ্রেপ্তার ৯

ঢাকা: মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দিনাজপুর, নীলফামারী ও ঢাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

গ্রেপ্তাররা হলেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, নীলফামারীর সৈয়দপুরের বিটস কোচিংয়ের পরিচালক আবদুল হাফিজ, চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ রাসেল, সোহানুর রহমান সোহান, তৌফিকুল হাসান এবং অপর দুই ব্যক্তি রায়হানুল ইসলাম সোহান ও বকুল রায়।  

এ সাতজন ছাড়া ঢাকায় পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চিকিৎসক ফয়সাল হোসেন বাদশা ও ইবরার আলমকে। তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জব্দ করা হয়।  

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, আসামিরা সবাই মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের কাছে থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নাম পাওয়া গেছে। এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অন্য সদস্যদের বিষয়ে জানতে পারে সিআইডি।  

গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ ২০১০ সাল থেকে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের একটি মামলায় সাজ্জাদ আসামি। তিনি উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন।  

আর আবদুল হাফিজ কোচিং সেন্টারের পাশাপাশি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। গ্রেপ্তার সোহানুর রহমান ২০১৩ সালে হাফিজের কাছে থেকে প্রশ্নপত্র পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ভর্তি হন। পরে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।

সিআইডির এ কর্মকর্তা জানান, ফয়সাল আহমেদ চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইলেন্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ফয়সাল নিজেও পরে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে পড়েন।  

গ্রেপ্তার তৌফিকুল ইসলাম রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন তিনি। রনিকে আগেই গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। একই মেডিকেল থেকে পাস করা ইবরার আলমও সহযোগী ছিলেন রনির। ইবরার ২০১৩ ও ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছেন।  

গ্রেপ্তার আসামি রায়হানুল ইসলাম সোহান ও বকুল রায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁসকৃত প্রশ্ন পান ও বকুলকে সরবরাহ করেন। বকুল ভর্তিচ্ছু চার ছোট ভাইয়ের কাছে সে প্রশ্নপত্র বিক্রি করেন। ওই চারজনই বিভিন্ন মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছেন।

সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তি করান বলেও জানান সিআইডির এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
এমএমআই/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।