ঢাকা: গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইনে নাশকতায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে একজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় আহত হন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সহকারী লোকোমাস্টার মো. সবুজ মিয়াও।
যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী লোকোমাস্টার
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী লোকোমাস্টার মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘ওই জিনিসটা আমি আর মনে করতেই চাচ্ছিলাম না। ওই রাতে প্রচুর কুয়াশা ছিল। সিগন্যাল দেখাটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের (মানুষের) চোখের ভিজ্যুয়াল বেশি কিন্তু কুয়াশা এত বেশি ছিল যে ১০-১৫ মিটারের বেশি দেখা যাচ্ছিল না। ইঞ্জিন শর্ট হুডেই (সামনে মুখী) ছিল। ’
‘পেছনে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখতে হয়। এগুলো ময়লাযুক্ত হওয়ায় ভিজ্যুয়াল আরও কমে যায়। রাজেন্দ্রপুর স্টেশন থেকে অলগ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ভাওয়াল গাজীপুর স্টেশনের আগে আমরা যখন স্টেশনের কাছাকাছি এলাম, তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম সিগন্যাল দেখার জন্য। একে তো স্টেশনের কাছাকাছি, আবার কুয়াশার কারণে সামনে বেশি দেখতে না পারায় গতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। এমন সময় হঠাৎ লাইন থেকে চাকা পড়ে গেল। ’
‘একটা বড় ঝাঁকুনি খেলাম। নিয়ম অনুযায়ী আমরা ব্রেক কষলাম। কিছুক্ষণ রোলিং করে যাওয়ার পর ইঞ্জিন বাম দিকে কাত হয়ে যায়। হয়তো ওই জায়গায় মাটি নরম ছিল এবং জায়গাটা ঢালু ছিল। এমন সময় ইঞ্জিনটা আনব্যালেন্সড (নিয়ন্ত্রণহীন) হয়ে যায়। ইঞ্জিন আনব্যালেন্সড হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ঠিক ছিলাম। কিন্তু ইঞ্জিন আনব্যালেন্সড হওয়ার পর কোথায় আঁকড়ে ধরব, কীভাবে বাঁচব; এই সময়টা একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে গেছে। কিছু একটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ধরে রাখতে পারিনি। তারপর আর কিছু মনে নেই,’ বলেন এই সহকারী লোকোমাস্টার।
সবুজ মিয়া বলেন, ‘ইঞ্জিন পুরোপুরি পড়ে থেমে যাওয়ার পর আমরা সেখানে অনেকক্ষণ পড়েছিলাম। এরপর আমি সোজা হলাম। দাঁড়িয়ে নিজেকে সুস্থ মনে হলো। তারপরও হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাচ্ছিলাম। ’
‘আমি দাঁড়ানোর পর লোকোমাস্টার সাহেবের খোঁজ নিলাম। দেখলাম, তিনি আমারও নিচে চলে গেছেন। ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ঠিক আছেন তো তিনি আমাকে জবাব দিলেন, ঠিক আছি। কিন্তু তিনি দাঁড়াতে পারছেন না। কোমরে ব্যথা পেয়েছেন। ’
এরপর আমি বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, কোনো জায়গা আছে কিনা। ততক্ষণে লোকজন চলে এসেছে। আমার সামনের দরজা ছিল মাটির নিচে। আর লোকোমাস্টার সাহেবের সামনের দরজা ছিল ওপরে। লোকজন প্রথমে আমাকে ওপরের দরজা দিয়ে কোনোমতে বের করেন। কিন্তু এমএল সাহেব উঠতে পারছিলেন না। তারপর আমি দরজা টান দিয়ে ধরে রাখি এবং একজন লোক তাকে টেনে বের করেন,’ যোগ করেন তিনি।
এ ঘটনাটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা হাসান আজমল ভূঁইয়ার পরিকল্পনায় ঘটেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কাউন্সিলরসহ আরও ৬ জন- জান্নাতুল ইসলাম (২৩), মেহেদী হাসান (২৫), জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয় (৩৫), শাহানুর আলম (৫৩), মো. সাইদুল ইসলাম (৩২) ও সোহেল রানা (৩৮) গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এর আগে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রেললাইন কেটে ফেলায় দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। ট্রেন দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইন দিয়ে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভৈরব দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। অক্সি অ্যাসিটিলিনের মাধ্যমে রেললাইন গলিয়ে নাশকতা করে দুর্বৃত্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
এনবি/এসআইএস