ঢাকা: বিএনপিকে ডামি দল বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি আসন্ন নির্বাচনকে ডামি নির্বাচন বলে এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়া আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জের কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আসলে বিএনপি একটি ডামি দল। বাংলাদেশে প্রথম কিংস পার্টির নাম বিএনপি। তারাই তো ডামি দল। ভুঁইফোর, প্যাড সর্বস্ব, দুর্নীতিবাজদের নিয়ে জিয়াউর রহমান বিএনপি বানিয়েছে। জন্মগতভাবে বিএনপি গণতন্ত্র হত্যাকারী নির্বাচনবিরোধী দল।
১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে নির্বাচন বিরোধী সভা-সমাবেশ, কর্মকাণ্ড করা যাবে না এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিএনপিসহ নির্বাচন বিরোধী কিছু দল সভা-সমাবেশ করে নির্বাচন বিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, সবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। সরকার দেশের শান্তিপূর্ণ বিঘ্নিত করতে উসকানি দিতে চায় না। টুকটাক হামলা এখানে ওখানে হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদল যা করছে, সেটার বিরুদ্ধে তো অবশ্যই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিচ্ছে, তৎপর হচ্ছে। এছাড়া জনগণের পক্ষ থেকেও নির্বাচন বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিহত হবে, প্রতিরোধ হবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। অপেক্ষা করুন, এখনও সময় আছে।
একটি দলের শীর্ষ নেতাদের জেলের ভেতরে রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের জেলে রেখেছে কেনো? আপনারা কি ২৮ তারিখের পল্টন দেখেননি? পুলিশের হত্যা দেখেননি? গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনী যে নৃশংসতা, হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, ২৮ তারিখে পুলিশ হত্যা সেই দৃশ্যপটেরই প্রতিচ্ছবি মনে হয়নি? তখন বিএনপির শীর্ষ নেতা মঞ্চে, দায় এড়াবেন কি করে? তাদের উপস্থিতিতে তাদের কর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে হামলা করেছে। ৩৪ জন সাংবাদিক সেদিন আহত হয়েছেন। তখন ফখরুল সাহেব কোথায়? মির্জা আব্বাস কোথায়? আমির খসরু সাহেব কোথায়? তারা কী দায় এড়াতে পারবেন?
তিনি আরও বলেন, বিচার আদালতের অধীনে। চিরজীবন তো তারা কারাগারে থাকবেন, তা আমরা বলছি না। সরকার তাদের রাখেনি। দেশের যে আইনের শাসন আছে, সেই আইন ভঙ করে তারা জেলে। ফৌজদারি অপরাধে জেলে আছে। আদালত-আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।
১৪ দলের শীরকদের নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তারা জয়-পরাজয়ের ঝুঁকিতে আছেন এবং তাদের মধ্যে অসন্তুষ্ঠিও আছেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্র ভোট করবে, তাদের আমরা বাধা দেবো না। নির্বাচন থেকে জোর করে তাদের সরিয়ে নেওয়া আচরণবিধির লঙ্ঘন। এটা আমরা করতে পারবো না। জোটের শরীকরা দেশের অনেক বড় বড় নেতা। তারা জননেতা। আমি মনে করি, নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে যার জনগণের যেমন সমর্থন, তেমনই পাবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে কে হারবেন, কে জিতবেন এটার মধ্যে আমাদের কোনো হাত নেই।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা দেখেছেন। সিলেটে জনসভাস্থলে যতটা লোকসমাগম হয়েছে, তার চেয়েও বেশি লোক রাস্তায়। গোটা সিলেট শহরই জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত বিপুল উপস্থিতিই প্রমাণ করে, ৭ জানুয়ারি কী হবে। সেদিন জনতার বিজয় হবে। এটাই আমরা আশা করি। আমরা নির্বাচনমুখী তৎপরতা, প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি। উৎসবমুখোর পরিবেশ চারদিকে। কিন্তু টুকটাক সমস্যা এখানে ওখানে হয়। মেজর কোনো প্রবলেম কোথাও হয়নি।
তিনি আরও বলেন, উঁচু গলায় বিএনপি নেতারা বলতেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাচ্ছে, তার মন্ত্রীরা পালিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাচ্ছে, এমনকি পালানোর জন্য কোনো অলিগলিও খুঁজে পাবে না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো, পল্টনে ২৮ তারিখে কি যে দৌড় বিএনপি নেতাদের। এখানে গিয়ে পড়ে, ওখানে গিয়ে পড়ে। এই হচ্ছে তাদের অবস্থা। এই পলাতক দল এখন অসহযোগ আন্দোলন করবে!
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বিরোধীদের বিরুদ্ধে অসহযোগ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে হাট-বাজারে যান, রাস্তা-ঘাটে যান, দোকান-পাটে যান, জীবন-যাত্রা স্বাভাবিক। এর অর্থ কি? বিএনপির ডাকে জনগণ সাড়া দেয়নি। বিএনপি যতই নির্বাচন বিরোধী গুপ্ত সন্ত্রাস করছে, অগ্নি সন্ত্রাস করছে, ট্রেনে আগুন দিচ্ছে, বাস পোড়াচ্ছে, ততই জনগণের যার যার কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি স্বাভাবিক। মানুষ আজকে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে এবং আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপিকেই মানুষ অসহযোগ করবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, তারেক রহমান টেমস নদীর ওপার থেকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। সাহস থাকলে তিনি আসুন। নেতা তো নেই, নেতা তো আসতে হবে। রিমোট কন্ট্রোলে পলাতক নেতা কী করে নেতৃত্ব দেবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু জীবনেও আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুর কন্যার অভিধানেও আপস শব্দটি নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এসব গুপ্ত হামলা বন্ধ করুন। তা না হলে জনগণ আপনাদের ধরে থরে বিচার করবে। আপনাদের প্রতিহত করবে। আপনাদের গণশাস্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জনগণ নির্বাচন চায়, আপনারা (বিএনপি) নির্বাচন পণ্ড করতে চান। সেই আশা আপনাদের পূর্ণ হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
এসসি/এফআর