ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গারা ১০ ডলার করে রেশন পাবেন

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
১ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গারা ১০ ডলার করে রেশন পাবেন

ঢাকা: জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সহায়তা পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ডব্লিউএফপি তাদের মাসিক খাদ্য রেশন জনপ্রতি ৮ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ মার্কিন ডলার করবে।

 পর্যায়ক্রমে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশে প্রস্তুত পুষ্টিচাল সরবরাহ শুরু করবে।  

রোববার (৩১ ডিসেম্বর)  ডব্লিউএফপির বাংলাদেশ অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।

ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি ডম স্কালপেলি বলেন, ২০২৩ সাল ছিল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি উত্তাল বছর, যারা একাধিক অগ্নিকাণ্ডের প্রাদুর্ভাব, ঘূর্ণিঝড় এবং প্রথমবারের মতো রেশন কমানোর মধ্য দিয়ে গেছে। ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসবের মধ্যে দাতাগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে –তাদের মহানুভব অবদানের কারণেই আমরা এখন এ বৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি এবং ডব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তায় বাংলাদেশে প্রস্তুত পুষ্টিচাল যোগ করতে পেরেছি।

আর্থিক সঙ্গতির তীব্র অবনতির ফলে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে। মার্চ মাসে কক্সবাজার ক্যাম্পের পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য ফুড ভাউচারের মূল্য জনপ্রতি ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ মার্কিন ডলার এবং জুনে ৮ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনা হয়। রেশন কমানোর আগেও পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪০ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগতো এবং ১২ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতো।

তারপর থেকে, ডব্লিউএফপির পরিবীক্ষণে দেখা গেছে যে জনসংখ্যার মধ্যে খাদ্য গ্রহণ ব্যাপক কমে গেছে এবং নেতিবাচক মোকাবেলার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে, জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ করেনি, যা জুন মাসে ৭৯ শতাংশ ছিল। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো শিশুদের মধ্যে পুষ্টির অবস্থার দ্রুত অবনতি।

সর্বশেষ পুষ্টি জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, তীব্র অপুষ্টি ১৫.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে -যা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আগমনের পর থেকে সর্বোচ্চ ছিল। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে ১৫ শতাংশের জরুরি সীমা অতিক্রম করেছে।

২০২৩ সালে শরণার্থীরা আবারও একাধিক অগ্নিঝুঁকি এবং বারবার ঘূর্ণিঝড়, বর্ষাকালীন বন্যা ও ভূমিধসের শিকার হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মানব পাচারের কারণে তাদের ঝুঁকি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।  ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৬৮ জন রোহিঙ্গা নৌকায় করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সমুদ্র্র পাড়ি দিয়েছে; এদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।

রেশন বৃদ্ধির পাশাপাশি ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাদেশে প্রস্তুত পুষ্টিচাল বিতরণ শুরু করবে। পর্যায়ক্রমে ১-২টি ক্যাম্পে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার ও ভাসানচর দ্বীপের সব ক্যাম্পে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

স্কালপেলি বলেন, বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার পাশাপাশি আমরা রোহিঙ্গাদের প্রতিও সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের সব দাতাদের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং ২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ ও পুষ্টিকর রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তাদের আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রস্তুত পুষ্টিচাল যুক্ত করে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য রেশন জনপ্রতি ১২.৫০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করার জন্য বর্তমানে ডব্লিউএফপির ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল-ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
টি আর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।