ঢাকা, সোমবার, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

‘লোভ করলে জান নিয়েও বাইর হইতে পারতাম না’

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৯, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
‘লোভ করলে জান নিয়েও বাইর হইতে পারতাম না’

ঢাকা: রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মোল্লাবাড়ি বস্তিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করতেন লাবু জাহাঙ্গীর (৪০)। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) যখন ওই বস্তিতে আগুন লাগে তখন ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি।

হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে উঠে দেখেন বস্তিতে আগুন লেগেছে। এরপর আর কোনো কিছু চিন্তা না করেই দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বস্তি থেকে বের হন তিনি।

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় লাবু জাহাঙ্গীরের ঘর। নিজের ও পরিবারের জীবন ছাড়া ঘর থেকে বের করতে পারেননি একটি সুতাও। এখন তীব্র শীতের মধ্যে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটানো ছাড়া কোনো উপায় নেই তার।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মোল্লাবাড়ি বস্তির পাশে রেললাইনের পাশে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে একটি ভ্যানের ওপর বসে থাকতে দেখা যায় লাবুকে। তার স্ত্রীর নাম রমনা (২৫), মেয়ের নাম শারমিন (৭) ও ছেলের নাম সাজ্জাদ (২)। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে। লাবু কারওয়ান বাজারের মাছের বাজারে বরফ ভাঙার কাজ করেন, স্ত্রী গৃহিণী।

গত রাতের বর্ণনা দিয়ে লাবু বলেন, আমরা ঘুমাই ছিলাম। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ মানুষের হই-হল্লা শুনতে পাই। তখন আমার স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে আগুন লাগছে। তাড়াহুড়া করে উঠে পোলাকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দেখি মুখের সামনে আগুন। তারপর আমি পোলাকে আর আমার স্ত্রী মেয়েকে কোলে নিয়ে কোনোমতে বের হয়ে আসছি।

তিনি আরও বলেন, পরনে যা ছিল শুধু সেটা নিয়ে বের হইছি। আর একটা সুতাও বের করতে পারিনি। ঘরে দুইটা মোবাইল ছিল, সেটা পর্যন্ত নিতে পারি নাই। একটা ফোন যে করব, সেই পরিস্থিতিও নেই। আগুন আমার দুই ঘর পাশেই লাগছিল। সবার আগে আমার ঘরই পুড়ছে। ঠিক সময়ে বাইর না হইলে আমরাও পুড়ে মরতাম। আল্লাহ বাঁচাইছে। কোনো কিছুর লোভ করিনি। লোভ করলে জানটা নিয়েও বাইর হইতে পারতাম না। শুধু জানটা বাঁচাইছি!

বস্তিতে থাকার জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতেন লাবু। এই বস্তিতে তার ঘরের মতোই আরও অন্তত ৩০০টি ঘর ছিল। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেসব টিন-কাঠের ঘর। অগ্নিকাণ্ডের পর সারা দিনে শুধু একটি কম্বল, কয়েক কেজি চাল ও এক প্যাকেট ড্রাই কেক পেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

লাবুর স্ত্রী রমনাকে সন্তানদের ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে জড়িয়ে ধরে রাখতে দেখা যায়। এই ঠান্ডায় রাত কাটাবেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহ যেভাবে রাখছে, সেভাবেই থাকতে হবে। কিছু তো করার নাই। এই ভ্যানের উপর রাত কাটাব। আর কই যাব? ঢাকায় আমাদের আর কোনো আত্মীয়-স্বজন নাই। মরে গেলেও এখানেই থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মেয়েকে এই বছরই স্কুলে ভর্তি করাব ভাবছিলাম। আগামীকাল বস্তির পাশের একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে। এই বছর আর মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে না।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ২৩ মিনিটে মোল্লাবাড়ি বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট কাজ করে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বস্তির প্রায় তিন শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে পুড়ে মারা যায় এক শিশু ও এক নারী। দগ্ধ হয়েছে আরও এক শিশু ও এক নারী। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। নিহতদের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন:
কারওয়ান বাজার বস্তিতে আগুন, মিলল ২ মরদেহ

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ 
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।