ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নির্বাচনী সহিংসতা: কালকিনির লক্ষ্মীপুরে কাটেনি আতঙ্ক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
নির্বাচনী সহিংসতা: কালকিনির লক্ষ্মীপুরে কাটেনি আতঙ্ক

মাদারীপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মাদারীপুর-৩ আসন অর্থাৎ কালকিনিতে ঘটে গেছে একাধিক সহিংসতা। গত ২১ ডিসেম্বর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে বোমা হামলার পর এখনো আতঙ্ক কাটেনি ওই এলাকায়, স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি।

একের পর এক ঘটনায় হাটবাজার ও বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে গেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক। রাস্তাঘাটে অপ্রয়োজনে বের হচ্ছে না মানুষ। বর্তমানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সার্বক্ষণিক মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর বিকেলে মাদারীপুর-০৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের পক্ষে লক্ষ্মীপুরে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে অংশ নেন তাহমিনার সমর্থক এসকেনদার খাঁ। এ সময় মিছিলে বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় প্রতিপক্ষ। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক বেপারীসহ ৫৭ জনের নামে কালকিনি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২৩ ডিসেম্বর সকালে বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটতে বের হন ভাটোবালী গ্রামের কৃষক এসকেনদার খাঁ। এ সময় এসকেনদারকে কুপিয়ে জখম করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে উদ্ধার করে প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে পাঠানো হলে দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এসকেনদার।  

২৪ ডিসেম্বর নিহতের ছেলে কিরণ খাঁ বাদী হয়ে কালকিনি থানায় ৩১ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

পরদিন সোমবার ভোর রাতে গাজীপুর থেকে ভাটোবালী গ্রামের মাকলেস খানের ছেলে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বিল্লাল খানকে (৩০) গ্রেপ্তার করে মাদারীপুরের জেলার গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এ ঘটনায় ফজলুল হক বেপারীসহ বেশ কয়েকজন জামিনে রয়েছেন।

এদিকে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন কাতেব আলী সরদার। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হলে আদালতে তোলা হয় তাফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজীকে। পরে তাকে কারাগারে পাঠান আদালতের বিচারক।

স্থানীয়রা জানান, একের পর এক ঘটনায় পুরো লক্ষ্মীপুরে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। অনেকটাই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। হাটবাজারে ভয়ে দোকান খুলছে না অনেকেই। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরেও বের হচ্ছে না কেউ। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও কমে গেছে উপস্থিতি। ভয়ে বিদ্যালয়ে আসছে না শিক্ষার্থীও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক মুদি দোকানি জানান, দোকানে বেচাকেনা কমে গেছে। এখন আর বাজারে লোকজন তেমন নেই। দুইপক্ষ মারামারি করে, আর প্রভাব পড়ে আমাদের ওপর।  

ভ্যান ও ইজিবাইক চালকেরা জানান, ভ্যান চালিয়ে আগে যা পেতাম, এখন তার অর্ধেকও পাই না। রাস্তায় যাত্রী নেই। পুলিশ আছে এজন্য পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, পুলিশ চলে গেলে আবারও মারামারি হবে। কারণ এই এলাকার মানুষের এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের মতো গরিব মানুষ।

লক্ষ্মীপুর ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রায়ই মারামারি হচ্ছে এখানে। এতে সবার মাঝে ভয় কাজ করছে। বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম। ক’দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০টি গাছের চারা কর্তন করেছে দুর্বৃত্তরা, এতে আরও ভয় বাড়ছে। '

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক বেপারী বলেন, আমার লোকজন হাটবাজারে যেতে পারে না। যারা যায় তাদের মারধর করা হয়। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার ও জনগণের নিরাপত্তা চাই।

এ ব্যাপারে তোফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক গেন্দু কাজীর পক্ষে একজন বলেন, নির্বাচনের আগে মারামারি হলেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। নির্বাচনের পরে কোনো সমস্যা হয়নি। একটি পক্ষ সব সময় পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে। আমরা চাই লক্ষ্মীপুরে শান্তি।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। হাটবাজারে স্বাভাবিকভাবে মানুষ আসা যাওয়া করবে, এতে বাঁধা নেই। আসামি ধরার ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, 'লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বদাই পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন মামলার আসামিদের ধরতেও চলছে অভিযান। '

উল্লেখ্য, নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকা প্রতীকে পরাজিত হয় ড. আবদুস সোবহান মিয়া। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। অপরদিকে এই আসনে ঈগল প্রতীকে বিজয়ী হন তাহমিনা বেগম। তিনি কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে ড. আবদুস সোবহান মিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন ফজলুল হক বেপারী। আর তাহমিনা বেগমের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তোফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজী।

বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।