মেহেরপুর: নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলার নিষ্পত্তিতে আদালতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভবনের তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন এক দম্পতি।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ২টার সময় মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের তৃতীয় তলায় এই ঘটনা ঘটে।
আহত দম্পতি হলেন - মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মামুন ও তার স্ত্রী সীমা খাতুন। একই উপজেলার রামদেবপুর মালিপাড়া গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের মেয়ে সীমা।
আহত মামুনের দাবি, বিষয়টি দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যদিও আহত সীমার দাবি, স্বামী মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে তিনতলা থেকে ফেলে দিয়েছেন। ওই সময় স্বামীকে জড়িয়ে ধরলে তিনিও সঙ্গে নিচে পড়েন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মামুন ও সীমার বিয়ের ১০ বছর পার হলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় সীমা তার স্বামীর সঙ্গে সংসার না করার জন্য পারিবারিকভাবে চাপ দেন। কিন্তু মামুন তার স্ত্রীকে তালাক দিতে না চাওয়ায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে সীমা খাতুন তার স্বামীর নামে যৌতুক ও নারী নির্যাতনসহ চারটি মালা দায়ের করেন।
আজ সোমবার মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে যৌতুক মামলার নিষ্পত্তির দিন ধার্য ছিল। রায় শেষে আদালত ভবনের তৃতীয় তলার বারান্দায় স্ত্রী সীমা খাতুনকে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মামুন। এতে রাজি না হলে তাদের দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তিনতলা থেকে নিচে পড়ে যান।
আদালত চত্বরের লোকজন তাদের দুজনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিজেও তিনতলা থেকে পড়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন আহত মামুন।
তিনি বলেন, সন্তান না হওয়ায় স্ত্রী সংসার করতে চাচ্ছে না। হাজারও চেষ্টা করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছিলাম না। আজকে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তার সঙ্গে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এসময় সে তিনতলা থেকে পড়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনেই তিনতলা থেকে পড়ে যাই।
এদিকে স্বামী মামুন তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ স্ত্রী সীমার।
তিনি বলেন, মামুন আমাকে জোর করে সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। আজকে মামলার দিন ছিল। হাজিরা শেষে আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় মামুন আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি যেতে না চাইলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে তিনতলা থেকে ফেলে দিতে চায় সে। পড়ে যাওয়ার সময় আমি তাকে জড়িয়ে ধরলে দুজনেই পড়ে যাই।
এ বিষয়ে মামুনের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, মামুন তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে ভালোবাসেন। তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চান না। আজ আদালতে যৌতুক মামলা নিষ্পত্তির দিন ছিল। ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। তারপরেও মামুন তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে সংসারে ফেরানোর চেষ্টার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে।
সীমার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীকে জোর সংসার করানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এই ঘটনা নাকি ক্রোধের বসে স্ত্রীকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন মামুন, এটা তদন্ত হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসএএইচ