ঢাকা: গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বয়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে সারাদেশে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হিটার ও গিজারের দাম বৃদ্ধি, সার্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, মানুষের কাছে বিলাসী পণ্য কেনার মতো টাকা না থাকা ও সময়মতো শীত না পড়ায় এসব মৌসুমী ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি কমেছে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানেই রুমের তাপমাত্রা বাড়ানোর হিটার এবং ব্যবহৃত পানি গরম করার গিজার ও ইন্সট্যান্ট ওয়াটার হিটার বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্র্যান্ডের, বিভিন্ন মানের দেশি-বিদেশি হিটার ও গিজারে সয়লাব পুরো মার্কেট। ক্রেতারাও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের পাশাপাশি শীতে ব্যবহৃত এসব হিটার ও গিজার কিনছেন।
সাধারণত বিত্তবান ও উচ্চ মধ্যবিত্তরাই শীতকালে ঘরে হিটার ও গিজার ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া যাদের ঘরে ছোট শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ আছেন তাদের কাছেও চাহিদা রয়েছে এসব পণ্যের। সেই তুলনায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে হিটার ও গিজার কেনার প্রবণতা কম দেখা গেছে।
সরেজমিনে স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দেড় হাজার ওয়াট থেকে শুরু করে আড়াই হাজার ওয়াটের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হিটার পাওয়া যাচ্ছে এই মার্কেটে। এসব হিটারের দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে বুশরা ব্র্যান্ডের দুই হাজার ওয়াটের হিটার এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা, নোভা ব্র্যান্ডের দুই হাজার ওয়াটের হিটার তিন হাজার টাকা, আড়াই হাজার ওয়াটের হিটার চার হাজার ৫০০ টাকা, মিয়াকো ব্র্যান্ডের দুই হাজার ওয়াটের হিটার চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা, এক হাজার ৮০০ ওয়াটের হিটার তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, কেমিই ব্র্যান্ডের দুই হাজার ওয়াটের হিটার চার হাজার ২০০ টাকা, কোয়ার্টজার ব্র্যান্ডের এক হাজার ২০০ ওয়াটের হিটার দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই মার্কেটে গিজার পাওয়া যাচ্ছে ২০ লিটার থেকে শুরু করে ৬৭ লিটার পর্যন্ত। এসব গিজারের দাম রাখা হচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে দেওয়ানকো ব্র্যান্ডের ৩০ লিটারের গিজার ৮ হাজার টাকা, ৪৫ লিটারের গিজার সাড়ে ৮ হাজার টাকা, ৬৭ লিটারের গিজার ৯ হাজার টাকা, মিডিয়া ব্র্যান্ডের ৩০ লিটারের গিজার ১৩ হাজার টাকা, মিয়াকো ব্র্যান্ডের ২০ লিটারের গিজার সাড়ে ৮ হাজার টাকা, ৫০ লিটারের গিজার সাড়ে ১৫ হাজার টাকা, ফায়ার বার্ড ব্র্যান্ডের ৩০ লিটারের গিজার সাড়ে ১১ হাজার টাকা, কনকা ব্র্যান্ডের ২৮ লিটারের গিজার ১১ হাজার টাকা, ৪০ লিটারের গিজার ১২ হাজার টাকা, ৫০ লিটারের গিজার ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু দেশি ব্র্যান্ডের গিজার আরো কম টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইন্সট্যান্ট ওয়াটার হিটার ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় এই বছর হিটার ও গিজারের দাম ১০-২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, গত কয়েকদিনে শীত বাড়ায় হিটার ও গিজার বিক্রি বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি ৪০-৫০ শতাংশ কম হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, বিক্রি আগের মতোই আছে।
স্টেডিয়াম মার্কেটের অপু ইলেক্ট্রনিক্সের বিক্রেতা দেলোয়ার বলেন, হিটার ও গিজারের বিক্রি নেই বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বিক্রি কমেছে। মানুষের কাছে টাকা না থাকায় এবার বেচাবিক্রি খারাপ।
প্রিন্স ইলেক্ট্রনিক্সের ইনচার্জ মাহমুদ বলেন, আমরা সাধারণত কনকা ব্র্যান্ডের গিজার বিক্রি করি। আমাদের গিজার বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা প্রভাবও পড়েছে।
সনিও ইলেক্ট্রনিক্সের সেলস এক্সিকিউটিভ নাজমুল বলেন, মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। আসলে মানুষের কাছে টাকা নেই। মানুষ বাজার সদাই করেই কুলিয়ে উঠতে পারছে না। হিটার-গিজার তো বিলাসী পণ্য। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার পর আর এসব বিলাসী পণ্য কেনার সামর্থ্য তাদের হচ্ছে না। এই বছর শুরুতে বিক্রি খুবই খারাপ ছিল। গত কয়েকদিন ঠান্ডা পড়ায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু যেই পরিমাণ ক্রেতা আসার কথা, তেমন আসছে না।
মিয়াকো ব্র্যান্ডের শো রুমের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. রাকিব বলেন, যারা গত বছর হিটার কিনেছে তারা তো এবার আর কিনবে না। তারপরও বিক্রি ভালোই হচ্ছে। গিজারের তুলনায় হিটার বেশি বিক্রি হচ্ছে।
নোভা ব্র্যান্ডের শো-রুমের ম্যানেজার মো. শামীম বলেন, গত বছরের তুলনায় এই বছর ৪০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। পণ্যের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো।
তবে হিটার ও গিজারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তেমন কোনো অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি ক্রেতাদের। স্টেডিয়াম মার্কেটে হিটার কিনতে আসা পাভেল নামের এক ক্রেতা বলেন, আমার কাছে দাম আগের মতোই মনে হচ্ছে। অনলাইনেই প্রায় একই দাম। দুই হাজার ওয়াটের একটি হিটার কিনেছি এক হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে। তবে মানভেদে আরো বেশি দামেরও আছে।
কালি কৃষ্ণ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাসায় ছোট বাচ্চা থাকায় হিটার কিনতে এসেছি। দর দাম দেখছি। এখনো কিনিনি। অনলাইনে যা দাম দেখেছি, বাজারেও প্রায় সেই একই দাম।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
এসসি/এসআইএস