ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে বসেছে ৩১ স্প্যান, ৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে বসেছে ৩১
স্প্যান, ৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর বুক চিড়ে ক্রমশই দৃশ্যমান হচ্ছে উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের রেলওয়ে সেতু (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু)।  

ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে যমুনায় চলছে সেতু নির্মাণ কাজ।

বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের সবচেয়ে বড় এ রেলওয়ে স্থাপনাটির ৩ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  

সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইয়াসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেনচার।  

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর প্রান্তে সেতুর ২৪ থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছে তারা। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেনচার। সিরাজগঞ্জ প্রান্তে ২৩ থেকে ১ নম্বর পিলার পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। এছাড়া সেতুর উভয়প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত আছেন। সেতুর ৫০টি পিলার, দুটি পিলারের মধ্যে ১টি করে অর্থাৎ ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার।  

প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৪৩টি পিলার স্থাপন শেষ হয়েছে। বাকি ৭টি পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে সেতুর ৩ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৮৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। নির্ধারিত সময়েই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ সব মিলিয়ে ৭৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজ আগস্টেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু অপর প্যাকেজটির কিছু কাজ বাকি থাকবে। চুক্তির মেয়াদটা ৩/৪ মাস বাড়াতে হতে পারে। তবে আমরা অফিসিয়ালি অনুমোদন করিনি। এগুলো অ্যাসেসমেন্ট করছি। সব মিলিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।  

আমাদের ডিপিপির মেয়াদ ২০২৫ পর্যন্ত আছে। মেয়াদের আগেই চুক্তি অনুযায়ী শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ডব্লিউডি-২ প্যাকেজ কিছুটা পিছিয়ে আছে, যোগ করেন তিনি।  

১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। নির্মাণের পর সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।