ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হাসপাতালে নেই প্রিজন ওয়ার্ড, আসামি পালানোসহ নানা ঝুঁকি

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
হাসপাতালে নেই প্রিজন ওয়ার্ড, আসামি পালানোসহ নানা ঝুঁকি

গাজীপুর: গাজীপুরে জেলা কারাগারসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে বন্দি কয়েক হাজার গুরুত্বপূর্ণ আসামি। এ আসামিদের চিকিৎসার জন্য জেলার সরকারি হাসপাতালে নেই কোনো প্রিজন ওয়ার্ড।

সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই তাদের চিকিৎসা দিতে হয়।  

বন্দিদের চিকিৎসায় অনেক সময় পর্যাপ্ত প্রহরার ব্যবস্থা থাকে না। এতে গুরুত্বপূর্ণ আসামি পালানো, আসামি ছিনতাইসহ নানা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। পাশাপাশি হাসপাতালের সাধারণ রোগীরাও ভয়ে থাকেন।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে রয়েছে জেলা কারাগার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার।  

এর মধ্যে চারটি কারাগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর বিদ্রোহের আসামি, জেএমবি, হুজির মতো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ১০ হাজার বন্দি রয়েছেন।  

জানা গেছে, কারাগারের বন্দিরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু এ হাসপাতালে বন্দিদের চিকিৎসায় প্রিজন ওয়ার্ড নেই। তাদের প্রহরার ক্ষেত্রে পুলিশ এসকর্ট চাওয়া হলেও অনেক সময় পাওয়া যায় না।  

এতে নিরস্ত্র কারারক্ষীদের সঙ্গে রেখেই চিকিৎসাধীন বন্দিদের নিরাপত্তা ও প্রহরার ব্যবস্থা করতে হয়। এতে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া অথবা আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। আর গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই বন্দিদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে সাধারণ রোগীদের মধ্যেও ভীতি কাজ করে।  

এদিকে হাসপাতালটিতে আলাদা প্রিজন ওয়ার্ড না থাকায় অনেক সময়ই বন্দিদের ঢাকায় পাঠানো হয়। ফলে সরকারি খরচ বেড়ে যায়। তা ছাড়া, পথে বন্দি ছিনিয়ে নেওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে অনেক আসামির শারীরিক অবস্থার অবনতিসহ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।  

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, এ কারাগারে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর বিদ্রোহের আসামি, জেএমবি, হুজি, জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আলাদা প্রিজন ওয়ার্ড না থাকায় নানান সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।  

তিনি বলেন, অনেক সময় পুলিশ চাওয়ার পরও পাওয়া যায় না। ফলে এখানে অনেকটাই ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া অনেক সময় অসুস্থ আসামিদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রেও আসামি পালিয়ে যাওয়া, পথে আসামির মৃত্যুসহ নানা ঝুঁকি থাকে। এতে সরকারের খরচও বেড়ে যায়।  

তিনি আরও বলেন, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্দিদের জন্য আলাদা প্রিজন ওয়ার্ড থাকলে এ ধরনের ঝুঁকি ও সরকারের খরচ কমে যাবে। এ হাসপাতালে আলাদা প্রিজন ওয়ার্ড স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, কারাবন্দিদের চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে হাসপাতালে প্রিজন ওয়ার্ডের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আবেদন দিয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। এরপর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রিজন ওয়ার্ড করা যায় কি না, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪
আরএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।