ঢাকা: শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানা এলাকায় ইজিবাইক চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী আরিফসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আরিফ (২২), পারভেজ বেপারী (২৬) ও সজিব বেপারী (২২)।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ সদর ও বনানী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বিষয়টি জানান।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়, অটোরিকশা চালক হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু মাদবরের সঙ্গে গ্রেপ্তার আরিফের টাকা-পয়সার লেনদেন ছিল। তাদের মধ্যে দেনা পাওনা নিয়ে তর্কবিতর্ক এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরিফ হাবিবের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। গ্রেপ্তার আরিফ তার বন্ধু নাহিদ সরদার, গ্রেপ্তার পারভেজ বেপারী, সজিব বেপারীসহ তার আরও বেশ কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে এ ব্যাপারে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা মোতাবেক ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা একত্র হয়ে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সখিপুর থানাধীন কাচিকাটা ইউনিয়নের ৮৯ নং হাজিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করে। ভুক্তভোগী হাবিব অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার বাজার থেকে সখিপুর থানার চর দুলার চর এলাকায় যাওয়ার পথে অটোরিকশা থামিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর ওপর তারা হামলা চালায়।
হামলার সময় নাহিদ সরদার তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে হাবিবুর রহমানের মাথায় কোপ দেয়। এ সময় হাবিবুর রহমান মাথা সরিয়ে নিলে তার কাধেঁ চাপাতির কোপ লাগে। পরে পারভেজ ও সজিবসহ অন্যান্য সহযোগীরা ভুক্তভোগীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং গ্রেপ্তার আরিফ হাবুর পেটে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এতে হাবু গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে। তারপর হযোগীরা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় স্থানীয় জনতা নাহিদ সরদারকে আটক করে এবং এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। আদালতে গ্রেপ্তার নাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ওই ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ ও অন্যান্য আসামিদের ভূমিকাসহ তাদের নাম উল্লেখ করে।
তিনি জানান, স্থানীয় লোকজন হাবুকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় একটি সরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভুক্তভোগীর বড় ভাই জসিম মাদবর বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার অন্য তিনজন এজাহারনামীয় আসামি আশরাফুল দেওয়ান, মাহাবুব বেপারী ও ইউসুফসহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিরা পলাতক। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, আরিফ সখিপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সে মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাতো, কখনও কখনও ট্রাকের হেলপারি করতো কিন্তু তার মূল কাজ ছিল কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা। নিজে বেপরোয়া চলাফেরার পাশাপাশি এলাকায় কিশোরদের টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করাতো।
তিনি আরও জানান, পারভেজ এবং সজিব বেপারী আপন দুই ভাই। পারভেজ ৮ম শ্রেণি এবং সজিব ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাদের মা একজন জর্ডান প্রবাসী এবং বাবার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অল্প বয়সে বাবা-মাকে কাছে না পেয়ে পড়াশোনা না করে তারা এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তারা আরিফের নেতৃত্বে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। গ্রেপ্তার আরিফ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী পারভেজ সবাইকে ফোন করে একত্র করে এবং নিজে এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
এসজেএ/জেএইচ