ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো ছাত্রলীগের চার নেতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
সিলেটে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো ছাত্রলীগের চার নেতা

সিলেট: সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চার ছাত্রলীগ নেতার তিনজনের দাফন ও একজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে জৈন্তাপুর রাজবাড়ি মাঠে নিহত তিনজনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন বিকেল ৪টায় নিজপাট সদরের শ্মশানে নিহত অপর ছাত্রলীগ নেতা নেহাল পালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

জানাজার নামাজের আগে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন- সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ এমপি, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত কুমার সরকার, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি  কামাল আহমদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, সদস্য মো. গোলাপ মিয়া, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী, নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইন্তাজ আলী, জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার, চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান চৌধুরী, ডৌ-বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক শাহেদ আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাহেল সিরাজ।

নেতারা নিহতদের রুহের মাফেরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পরিবারে পক্ষে সবার কাছে দোয়া চেয়ে বক্তব্য দেন নিহত জুবায়ের আহসানের বাবা জামাল উদ্দিন, আলী হোসেন সুমনের চাচাত ভাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ, মেহেদী হাসান তমালের চাচাত ভাই মাস্টার মাসুক আহমদ।

এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণীর হাজারো মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। পরে তাদের নিজ নিজ মহল্লার গোরস্থানে দাফন করা হয়।

দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের মৃত্যুতে উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাত ১টার দিকে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকারে থাকা চার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলা সদর (নিজপাট) ইউনিয়নের জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল সংলগ্ন তোয়াসি হাটির বাসিন্দা বনদিপ পালের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা নেহাল পাল (২৫), কমলা বাড়ির গ্রামের জামাল আহমদের ছেলে জুবায়ের আহসান (২৪), বড় পুকুরপাড় পানিয়ারা হাটির আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান তমাল (২২) ও জাঙ্গাল হাটির হারুনুর রশিদের ছেলে আলী হোসেন সুমন (২৩)।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে জৈন্তাপুর বাজার থেকে চা পান করে প্রাইভেটকার আরোহী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জাফলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। ওই সময় চালকের আসনে ছিলেন জুবায়ের আহসান। তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি বাংলাবাজার ব্রিজের পাশে রাংপানি নামক স্থানে যাওয়া মাত্র ট্রাকের ধাক্কায় সড়কের পার্শ্ববর্তী মসজিদের পুকুরে পড়ে যায়।

ঘটনার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা চারজনকে উদ্ধার করে প্রথমে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক চারজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় চার বন্ধু একটি দোকানে চা পান করেন। প্রাইভেটকার নিয়ে জাফলং যাওয়ার পথে উপজেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে বাংলা বাজার এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকারটি পার্শ্ববর্তী খাদের পানিতে পড়ে যায়।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় তরুণ চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকশ ছাত্র-জনতা জড়ো হন। নিহতের স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধব হাসপাতালের জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসকের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুললে উত্তেজনা দেখা দেয়। গভীর রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল সংকট থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ছাত্র-জনতা। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ভাঙচুর করা হয়।

ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার খবর পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজেদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক রাজা, নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী সম্রাটসহ নেতারা ঘটনাস্থলে আসেন। সেসময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।  

জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সালাহ উদ্দিন মিয়া জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ এনে ভাঙচুরের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।