ঢাকা: ২০১১ সালে নাটোরের সিংড়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. ফরহাদ হোসেন মণ্ডলকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান জানান, ভিকটিম মোছা. ফাতেমা বেগমকে ২০০১ সালে বিয়ে করেন ফরহাদ। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ১৫ হাজার টাকা শ্বশুরের কাছ থেকে নেন তিনি। পরে তাদের পরিবারে দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
এক পর্যায়ে স্ত্রীকে আরও যৌতুকের টাকা আনতে চাপ দেন ফরহাদ। ভিকটিমের বাবার পরিবারেও অভাব-অনটন থাকায় তার বাবা আর যৌতুকের টাকা দিতে পারবেন না বলে জানায়।
ভিকটিমের বাবা আর কোনো টাকা দিতে পারবেন না জানতে পেরে ফরহাদ, তার বাবা-মা ও বড় ভাই ভিকটিম ফাতেমাকে নির্যাতন করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ভিকটিমের বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে দেন।
শ্বশুরবাড়ি থেকে দেওয়া যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও ফরহাদ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। ঘটনাটি ভিকটিম তার বাবা-মাকে জানালে ভিকটিমের বাবার কাছে টাকা না থাকায় মেয়ের জামাইকে একটি গরুর বাছুর দেন।
কিন্তু ভিকটিমের বাবা টাকা না দেওয়ায় ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভিকটিম ফাতেমাকে তার স্বামী ফরহাদ শারীরিক নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে গলা চেপে ধরে হত্যা করেন। হত্যার পর ফরহাদ, তার বাবা-মা ও বড় ভাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমের বাবা-মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর দেয়। ভিকটিমের বাবা-মা ঘটনাস্থলে এসে তার মেয়েকে ফরহাদের শয়নকক্ষের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার পরে ৯ ডিসেম্বর ভিকটিমের বাবা বাদী ফরহাদ, তার বড় ভাই মো. ফজল, বাবা হামিদ আলী ও মা মোছা. ফরিদা বেগমকে আসামি করে নাটোরের সিংড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ফরহাদকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে ফরহাদ গ্রেপ্তার হয়ে ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান। জামিনের এক বছর পর ফরহাদ ওমানে চলে যান। দীর্ঘ ৩ বছর ওমানে প্রবাস জীবন শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।
বিয়ের পর তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন ফরহাদ।
ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত গত ১৭ জানুয়ারি ফরহাদের মৃত্যুদণ্ড রায় দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ফরহাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
পিএম/আরবি