বরিশাল: বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের সালতা গ্রামে দুই বছর ধরে শিকলবন্দি হয়ে মানববেতর জীবনযাপন করে আসছেন তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী নাজমা আক্তার। অর্থাভাবে তার সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না স্বজনরা।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ওই নারীর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানা যায়, গত আট বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত গৃহবধূ নাজমা আক্তার (৩৫)। তিন বছর আগে স্বামী রহিম হাওলাদারের মৃত্যুর পর পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে সুচিকিৎসা করাতে পারেননি বৃদ্ধ বাবা উমর আলী হাওলাদার। স্থানীয় বিভিন্ন কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। ফলে শিকলে বাঁধা অবস্থায় জীবন কাটছে তার।
ছোট্ট একটি টিনের চালা ঘরে খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে এক পা বেঁধে রাখা হয়েছে নাজমাকে। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্মে ওই চালা ঘরের মেঝেতে খরের ওপর শুয়ে কিংবা ঘরের দরজার সামনে বসে থেকে শিকলবন্দি হয়ে জীবন কাটছে তার।
নাজমার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, তিন বছর আগে স্বামী রহিম হাওলাদারের মৃত্যুর পর পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নাজমা। অন্যত্র যাতে চলে যেতে না পারে সেজন্য গত দুই বছর ধরে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমাদের তিন বেলা খাবার জোটে না। সেখানে মেয়ের সুচিকিৎসা করাব কীভাবে। বাধ্য হয়ে মেয়েকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুম ফকির জানান, পরিবারটি অস্বচ্ছল। মানসিক ভারসাম্যহীন নাজমা আক্তারের সুচিকিৎসা করানোর মতো সক্ষমতা নেই। পরিবারের একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ষাটোর্ধ্ব বয়সী। তার ওপর পরিবারের সাত সদস্যের ভরণপোষণের দায়িত্ব। পরিবারটি মানববেতর জীবনযাপন করে আসছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে সুচিকিৎসার মাধ্যমে শিকলবন্দি জীবন থেকে নাজমা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আবদুল্লাহ খান জানান, গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন নামজা আক্তারের বিষয়টি জেনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে নামজার পরিবারকে সহায়তা করা এবং তার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
এমএস/এমজেএফ