ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া ভিসায় ওমান নিয়ে প্রতারণা, নিঃস্ব চার পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৪
ভুয়া ভিসায় ওমান নিয়ে প্রতারণা, নিঃস্ব চার পরিবার

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার চলাভাঙ্গা গ্রামে ভুয়া ভিসার অর্থ জোগাড় করতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে চার পরিবার। ঋণের অর্থ শোধ করতে না পেরে এখন পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় ওমান প্রবাসী মিজানুর রহমান ও তার বাবা শানু প্যাদার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন তারা।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা গ্রামের শানু প্যাদার ছেলে মিজানুর রহমান প্যাদা দীর্ঘদিন ধরে ওমান প্রবাসী। ওমান থেকে তিনি কয়েকটি কোম্পানিতে সুইপার, গাড়ি চালকসহ বিভিন্ন পদে লোক নেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে ভুয়া ভিসা তৈরি করে তার শানু প্যাদার নিকট পাঠান।  

এদিকে, শানু প্যাদা এলাকায় ঘুরে ঘুরে বেশি বেতনের আশ্বাস দিয়ে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। শানু প্যাদার লোভনীয় আশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চলাভাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে আউয়াল হাওলাদার, নাচনাপাড়া গ্রামের ছালাম আকনের ছেলে পলাশ আকন, চলাভাঙ্গা গ্রামের ওহাব গাজীর ছেলে রাহাত গাজি ও একই গ্রামের রুস্তুম গাজীর ছেলে শাহজালাল গাজি তাদের শেষ সম্বল জায়গা জমি, গরু ছাগল হাস মুরগি বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন শানু প্যাদার হাতে।  

পরে শানু প্যাদা বিভিন্ন সময়ে চারজনকে ভুয়া ভিসায় ওমান পাঠান। ওমানে গিয়ে শুরু হয় তাদের কষ্টের জীবন। সেখানে শানু প্যাদার ছেলে মিজানুর রহমান প্যাদা তাদেরকে একটি ঘরে বন্ধী করে রাখেন। এর মধ্যে আউয়াল হাওলাদারকে সাত মাস, রাহাত গাজীকে সাড়ে তিন মাস, পলাস আকন ও শাহজালাল গাজীকে পাঁচ মাস ছোট একটি নির্জন কক্ষে বন্ধী করে বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বন্ধী অবস্থায় তাদেরকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয়নি। এবং মারধর করে তাদের সঙ্গে নেওয়া টাকা পয়সাও রেখে দেয় মিজানুর প্যাদা। এমনকি আউয়াল হাওলাদারকে নির্যাতন করে তার গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী রিনা বেগমের নিকট থেকে মিজানুরের বাবা শানু প্যাদা আরও তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।  

দীর্ঘদিন বন্ধী থাকার পর নিজেদের টাকায় বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীরা দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তারা শানু প্যাদার নিকট টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তাদের মামলাসহ মারধরের ভয় দেখান। টাকা পয়সা জায়গা জমি গরু ছাগল হারিয়ে চারটি পরিবার এখন পথে পথে ঘুরছে। কেউ আবার পরিবার পরিজন নিয়ে দেনার ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ভুক্তভোগী আউয়াল হাওলাদার জানান, ওমান প্রবাসী মিজানুর রহমান প্যাদার বাবা শানু প্যাদা আমারে ৪০ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকায় ভুয়া ভিসায় ওমান পঠান। ওমানে যাওয়ার জন্য জায়গা জমি, গরু-ছাগল-হাঁস মুরগী, বউর নাকের শোনা, বাড়ির গাছপালাসহ সব বিক্রি করে শানু প্যাদার কাছে টাকা দেন।  

ওমানে নিয়ে আমাকে মারধর করে সাত মাস নির্জন কক্ষে আটকে রাখে। ওই অবস্থায় খাইতে দেওয়া হয় নাই আমাকে। পরে ভয় ভিতি দেখিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে আরও তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। পরে কোনো রকমে দেশে ফেরত আছি। এখন আমি পথের ফকির হয়ে গেছি। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।

ভুক্তভোগী পলাশ আকন বলেন, ওমান প্রবাসী মিজানুর রহমানের বাবা শানু প্যাদা ৫০-৬০ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে ড্রাইভিং ভিসায় পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া ভিসায় ওমান পাঠায়। ধারদেনা আর বাড়ির সব শেষ করে টাকা দিয়েছি। ওমানে নিয়া কোনো কাম কাজ না দিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করে পাঁচ মাস পরে আমাকে দেশে পাঠাইয়া দেয়। আমি দেনার ভয়ে বাড়িতে যেতে পারি না পালিয়ে থাকি। আমার টাকা ফেরত চাই।

অভিযুক্ত শানু প্যাদা আউয়াল, পলাশ, রাহাত গাজি ও শাহজালাল গাজীকে ওমান নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ওই দেশি মালিকের কাজের অনুমতি না পাওয়ায় তারা দেশে চলে আসে। ঘরে বন্ধী করে নির্যাতনের কথা মিথ্যা। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বলেন, একজনের টাকা ফেরত দিয়েছি। বাকিদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।